তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প

আতঙ্কে ইস্তাম্বুলবাসী

ভূমিকম্পের পর তুরস্কে চলমান উদ্ধারকাজ। ছবি: রয়টার্স

'ভীষণ যন্ত্রণায় আছি'—এমন আর্তি ইস্তাম্বুলবাসী আয়েশাগুল রাহভানচির। তার মতো আরও অনেকেরই একই আর্তি এখন।

স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলছে। প্রকৃতির এমন ধ্বংসলীলা দেখে ভীষণ আতঙ্কিত সেই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ও অন্যতম প্রাচীন শহর ইস্তাম্বুলের বাসিন্দারাও।

গতকাল রোববার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে তুরস্কে ভূমিকম্পের পরপরই দেশটির প্রধান শহর ইস্তাম্বুলের অনেক অধিবাসী নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এমন প্রবল ভূমিকম্প এ শহরে আঘাত করলে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। কারণ সেখানকার অনেক বাড়িঘর বেশ পুরনো।

ভূতাত্ত্বিকদের দৃষ্টিতে ভূগর্ভস্থ টেকটোনিক প্লেটের কারণে তুরস্ক ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দেশটি গড়ে উঠেছে একাধিক টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে। ইউরেশীয় ও আনাতোলীয় প্লেটকে বিভক্ত করা উত্তর আনাতোলীয় প্লেটের খুব কাছে ইস্তাম্বুল শহর।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ এবং ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইস্তাম্বুলের অধিবাসীদের মনে ভয় ঢুকিয়েছে।

ইস্তাম্বুলের ইলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুকরু ইরসয় সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, 'এই শহরে কবে ভূমিকম্প আঘাত করবে এটাই এখন সবার প্রশ্ন।'

তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে যে ভূতাত্ত্বিক তথ্য আছে তা বিশ্লেষণ করে বলা যায় যেকোনো সময় ইস্তাম্বুলে ভূমিকম্প হতে পারে। যদি আজকে ভূমিকম্প হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।'

সম্প্রতি ইস্তাম্বুলের মেয়র একরাম ইমামুগলু গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই শহরে ৯০ হাজারের মতো ভবন 'চরম ঝুঁকিতে'। ১ লাখ ৭০ হাজার ভবন 'মাঝারি ঝুঁকিতে'। শহরের বাসিন্দার সংখ্যা ২ কোটির মতো।

নতুন ভবন অনেক ব্যয়বহুল বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইস্তাম্বুলবাসী। ইস্তাম্বুলের কাদিকয় এলাকার বাসিন্দা ও বিক্রয়কর্মী আয়েশাগুল রাহভানচি জানিয়েছেন, তিনি যে বাসায় থাকেন সেটি প্রায় ২৫ বছরের পুরনো।

`নতুন বাসার ভাড়া খুব বেশি,' যোগ করেন তিনি।

ইস্তাম্বুলের বেয়গলু এলাকার বসিন্দা জয়নব উরস জানান, তিনি বাস করেন ৫০ বছরের বেশি পুরনো ভবনে।

'নতুন বাসায় উঠতে চাই। কিন্তু এখন যুক্তিসংগত ভাড়ায় বাড়ি পাওয়া মুশকিল। বড় মাপের ভূমিকম্প হলে কী যে হবে তাই ভেবে আতঙ্কিত', বলেন তিনি।

১৯৯৯ সালে তুরস্কের পশ্চিমে মারমারা অঞ্চলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ মারা যাওয়ায় সরকার ঘর বানানোর নিয়মনীতি কঠোর করে। পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি বানানোর নির্দেশ দেয় সরকার।

আয়েশা ও জয়নব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা যে বাড়িতে থাকেন সেগুলোর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।

কাদিকয় এলাকার অপর বাসিন্দা উগুর কুমতাস বলেন, 'যে ঘরে পরিবার নিয়ে থাকি সেই ঘরের প্রতি পুরোপুরি আস্থা নেই। যদিও বাড়িটির নির্মাণকাজ ২০২০ সালে শেষ হয়েছে।'

তুরস্কের অতি সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে দেখা গেছে পুরনো বাড়ির পাশাপাশি নতুন বাড়িও ধ্বংস হয়েছে।

অধ্যাপক সুকরু ইরসয় বলেন, 'তুরস্কে ১৯৯৯ সালের পর যেসব ভবন তৈরি হয়েছে সেগুলো নতুন গৃহ নির্মাণ নীতি মেনে চলা হয়েছে। তবে এদেশে আবাসন খাতে দুর্নীতি ব্যাপক। আছে ক্ষমতার অপব্যবহারও।'

তিনি আরও বলেন, 'গত সপ্তাহের ভূমিকম্পে অনেক নতুন ও বিলাসবহুল ভবনও ধ্বংস হয়েছে।'

সরকারি তথ্য মতে, ইস্তাম্বুলের ৭০ শতাংশের বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে ২০০০ সালের আগে তথা নতুন গৃহ নির্মাণ নীতি প্রণয়নের আগে। তাই এর অধিবাসীদের মনে এত আতঙ্ক।

 

Comments

The Daily Star  | English

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

19m ago