‘যদি না পারেন তবে দায়িত্ব ছেড়ে দেন’, শেবাচিম কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ঘুরে পরিচ্ছন্নতাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. জাহিদ মালেক।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি শেবাচিমের শিশু ও মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ড ঘুরে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে মন্ত্রী ক্যান্সার হাসপাতাল ও মা ও শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অডিটোরিয়ামে এক আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'হাসপাতাল নোংরা থাকবে এবং মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে না-এটা আর গ্রহণ করতে রাজি নই। যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিতে চাই– যদি না পারেন তবে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।'
হাসপাতালটির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'অন্য হাসপাতালের তুলনায় এই হাসপাতাল পিছিয়ে আছে। হাসপাতালের বাইরে খারাপ অবস্থা। এখানে চারিদিকে ফুলের গাছ দিয়ে ভরিয়ে দিতে হবে, যাতে মানুষের প্রথম দেখায় ভালো লাগে। এখানে চারিদিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে, হাসপাতালে শীতের মধ্যে মানুষকে শুয়ে থাকতে দেখেছি। এরপরে যখন আসবো এসবের উন্নতি দেখতে চাই।'
মন্ত্রী আরও বলেন, 'এই হাসপাতালের (শেবাচিম) আগে ক্যান্সারসহ বিশেষায়িত হাসপাতালের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম, সেগুলোও অন্যান্য বিভাগের তুলনায় কাজ পিছিয়ে আছে। যারা ঠিকাদার রয়েছেন তাদের বলতে চাই, যে টুকু পিছিয়ে পড়েছে সেটি যেন দ্রুত পূরণ করা হয়, তা নাহলে পেনাল্টিতে পড়তে হবে।'
মন্ত্রী এসময় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনায় সহযাগিতার জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, 'বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেড ১ হাজার শয্যা থেকে ১৫০০ শয্যা করার জন্য ব্যবস্থা নিতে আমি দ্রুত নির্দেশ দিচ্ছি।'
পাশাপাশি দ্রুত একটি এম আর আই মেশিন প্রদানের জন্যও নির্দেশ দেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের হোস্টেলের সমস্যার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, '৮টি বিভাগের হাসপাতালে ছেলেদের জন্য একটি ও মেয়েদের জন্য একটি হোস্টেল নির্মাণের বিষয়ে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে, যা অচিরেই পূরণ করা হবে। একে একে সব সমস্যা দ্রত পূরণ করা হবে। এই হাসপাতাল (শেবাচিম) অত্যন্ত পুরনো, নতুন ভবন নিয়ে এখনই চিন্তা করতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কাজ করেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা আমেরিকার চেয়েও এগিয়ে রয়েছি। আমাদের ২৯ হাজার মানুষ মারা গেছে, আমেরিকায় এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা গেছে এমনকি, ভারতেও প্রায় ৬ লাখ মানুষ মারা গেছে। প্রায় ৩৫ কোটি ভ্যাকসিন দিয়েছি, ভ্যাকসিন কভারেজে আমরা সারা পৃথিবীতে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছি। এর কিছু বিনামূল্যে পেলেও অনেকটা কিনতে হয়েছে। এসব খাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমরা ব্যাপক সংখ্যক নতুন ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিয়েছি, এর ফলে গত ২-৩ বছরে আমাদের জনবল প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।'
বিরোধীদলের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এতো সব উন্নয়ন পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টিকাদানে সাফল্য থাকলেও বিরোধীরা তা দেখতে পাচ্ছে না। এজন্য তাদের ছানি অপারেশন করতে হবে।'
শেবাচিম অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীনের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক অবদুল্লাহ ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেছা খান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলমসহ আরও অনেকে।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'প্রায় দেড় কোটি মানুষের চিকিৎসার প্রধান আশ্রয় শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতাল পরিচালনায় বর্তমানে প্রফেসর ছাড়াও বেশ কিছু শূন্য পদ রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালের ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছে। তবে চিকিৎসা না দিয়ে কাউকেই ফেরত পাঠানো হয় না, সাধ্যের মধ্যে যতটুকু আছে তা দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।'
Comments