মহাখালীর ক্যানসার হাসপাতালে ৬ রেডিওথেরাপি মেশিনের সবগুলোই বিকল
রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিআরএইচ) ১৯ দিন ধরে রেডিওথেরাপির ছয়টি মেশিনই বিকল হয়ে আছে। এতে প্রতিদিন ২০০ জনের বেশি ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।
ক্যানসার চিকিৎসায় দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল এনআইসিআরএইচ।
হাসপাতালের ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিনের মধ্যে দুটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর (লিনাক) দুই বছর আগে এবং দুটি কোবাল্ট মেশিন এক বছর আগে অকেজো হয়ে যায়।
এরপর থেকে বাকি দুটি লিনাক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০-২৩০ জন রোগীর চিকিৎসা চলছিল। সেগুলোও সম্প্রতি বিকল হয়ে যায়।
গত ২১ ডিসেম্বর থেরাপি চলার মধ্যেই একটি মেশিন বিকল হয়ে যায়। পরদিন অন্য একমাত্র চালু থাকা যন্ত্রটি বন্ধ হয়ে গেলে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে রেডিওথেরাপির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
গতকাল এনআইসিআরএইচ পরিদর্শনে গিয়ে রেডিওথেরাপি বিভাগের বাইরে একটি নোটিশ দেখা যায়। সেখানে মেশিনগুলো বিকল থাকার কথা লেখা রয়েছে। তবে কবে নাগাদ রেডিওথেরাপি শুরু হবে, সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। রোগীদের বলা হয়েছে, মেশিন চালু হলে পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
রেডিওথেরাপি মেশিনগুলো কবে নাগাদ মেরামত হবে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে দুটি নতুন রেডিওথেরাপি মেশিন বসানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা।
বর্তমানে ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিনই অকেজো থাকার কথা নিশ্চিত করেন এনআইসিআরএইচের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন ক্যানসার রোগীকে চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে যেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে একটি নতুন মেশিন চালু হবে এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আরেকটি নতুন মেশিন চালু করতে পারব।
'আরও চারটি মেশিন চালু করা গেলে আমরা প্রতিদিন অতিরিক্ত ৬০০ ক্যানসার রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারব।'
এনআইসিআরএইচে রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পদ্ধতিগত দুর্বলতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এই হাসপাতালে রেডিওথেরাপি সেবা পেতে রোগীদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় বলেও অভিযোগ আছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় এসে দেখছেন মেশিন বন্ধ।
মৌলভীবাজার থেকে আসা স্তন ক্যান্সারের রোগী ৫৩ বছরের রাবেয়া বেগম জানান, তিনি এনআইসিআরএইচে চারটি সেশনে রেডিওথেরাপি করিয়েছিলেন।
গতকাল সকালে তিনি তার নির্ধারিত পঞ্চম থেরাপির জন্য হাসপাতালে এসে জানতে পারেন মেশিন বন্ধ।
'আমার চিকিৎসার জন্য ধারকর্জ করতে হয়েছে। তারপরও আজ [গতকাল] আমার থেরাপি হলো না। বাকি পাঁচটি থেরাপি কীভাবে নেব জানি না,' বলেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনআইসিআরএইচের একজন চিকিৎসক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত পাঁচ বছর ধরে এই হাসপাতালের রোগীরা হয় ত্রুটিপূর্ণ মেশিনের কারণে, না হয় অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছুই করেনি। আমরা এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও সাহায্য চেয়েছিলাম, তারাও কিছু করেনি।
'আমরা রোগীদের ফিরিয়ে দিতে দিতে হতাশ। রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারাটা একটা মেডিকেল টিমের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।'
Comments