নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ৩ মাস ধরে নেই ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট

নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল
নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী | ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

সারা দেশে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। এই অবস্থার মধ্যে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনীয় কিট না থাকায় রোগীদের ল্যাব সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট (তত্ত্ববধায়ক) মো. হেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিট সংকট থাকায় গত মে মাস থেকে এই হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'দিন দিন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। কিটের জন্য আমরা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি।'

ডেঙ্গু পরীক্ষা বন্ধ থাকায় রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

যোগাযোগ করা হলে নোয়াখালী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. আশরাফুর রহমান বুধবার দুপুরে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, চলতি জুলাই মাসের ১৯ দিনে ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বুধবার ১৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।

রোগীদের অভিযোগ, অন্তত ৬ গুণ বেশি টাকা দিলে জেনারেল হাসপাতালেই ডেঙ্গু সংক্রান্ত পরীক্ষা হয়।

এই অবস্থার জন্য তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি ও উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, কথিত সংকটের সুযোগ নিচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালের দালালরা।

সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলী হাবিব উল্যা মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল ৬ দিন জ্বরে ভুগে গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি নোয়াখালী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

মোস্তফা কামাল জানান, মঙ্গলবার তিনি ৪৭০ টাকা দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন। ওই হাসপাতালের একজন কর্মচারী তাকে এতে সহযোগিতা করেছেন।

একই দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নোয়াখালী সদর উপজেলার চর কাউনিয়া গ্রামের অটোরিকশাচালক আবদুর রহিম। হাসপাতালের ল্যাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে তাকে গুনতে হয়েছে ৪২০ টাকা।

বেগমগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত কিশোর সাইফুল ইসলাম ৩০০ টাকা দিয়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন।

রোগী ও তাদের স্বজন জানান, হাসপাতাল কর্মচারীরা যার কাছে যত বেশি টাকা আদায় করতে পারেন সেই চেষ্টা করেন।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বড়খেরী গ্রামের সেরাজ উল্যাহর ছেলে রাতুল গত শনিবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে কেমন খরচ হয়েছে জানতে চাইলে রাতুল বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য রোববার তার কাছ থেকে ৬২০ টাকা, সোমবার ৩০০ টাকা ও মঙ্গলবার ২০০ টাকা নিয়েছেন হাসপাতালের এক কর্মচারী।

বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতেও খরচ সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি সদর উপজেলার এওয়াজবালিয়া গ্রামের মো. হাসান ডেইলি স্টারকে জানান, ৪-৫ দিন জ্বরে ভুগে গত শনিবার তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অজ্ঞাত এক ব্যক্তির (দালাল) সহযোগিতায় ১ হাজার ২০ টাকায় তিনি ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়েছেন।

হাসান বলেন, 'ভর্তি হয়ে জানতে পারি, জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা হয় না। তাই প্রাইভেট ক্লিনিকে পরীক্ষা করিয়েছি। পরে জানতে পারলাম বেশি টাকা দিলে এই হাসপাতালেই পরীক্ষা হয়।'

একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন চাটখিল উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের প্রসাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন ও আবদুল হাইসহ অনেকে।

অনেক রোগীর স্বজন এর পক্ষে অবস্থান নেন। তারা বলেন, হাসপাতাল যথাযথ সেবা দিচ্ছে না। ওরা (দালাল) রক্তের নমুনা নিয়ে যায়, আবার রিপোর্ট পৌঁছে দিয়ে যায়। এতে আমাদের ভোগান্তি কমেছে।

'বাড়তি টাকা দিলে হাসপাতাল ল্যাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা হচ্ছে সে বিষয়টি তার জানা নেই,' বলেন হেলাল উদ্দিন।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

11h ago