‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মেহমানদের এখন আর আপ্যায়ন করতে পারি না’

ছবি: স্টার

'আমার কোনো সন্তান নেই। আত্মীয়-স্বজনদের সন্তানদের আমি সবসময়ই নিজের ছেলেমেয়ের মতো ভালোবাসি, আমি সবসময়ই তাদেরকে ২ হাত ভরে দিয়েছি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে আর আগের মতো ভালো খাওয়াতেও পারছি না...'

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) এর এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা জানান। ২০০৬ সাল থেকে তিনি বিটিসিএলে চাকরি করছেন। মহাখালী টিএনটি কলোনিতে বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, 'পাবলিক মনে করে আমরা সরকারি কর্মকর্তারা ভালো আছি। কিন্তু এখনকার বাজারদরের সঙ্গে আমাদের আয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই। বেতন থেকে বাসাভাড়া বাবদ একটি অংশ কেটে রাখা হয়। থাকে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। এটা নিয়ে বাবা-মায়ের চিকিৎসা খরচ, সংসার চালানো খুব কঠিন। বেতনের বাইরে আমার আর কোনো আয় নেই। অতিরিক্ত কিছু আয়ের সুযোগও নেই।'

ছবি: স্টার

মহাখালী টিএনটি কলোনির প্রায় সব বাসিন্দাই বাসার অন্তত একটি রুম ভাড়া দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমি কাউকে সাবলেটও দিতে পারছি না। বাড়িতে বাবা-মা আছেন। আর প্রতিমাসেই গ্রামের বাড়ি জামালপুর থেকে আমার আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন কাজে ঢাকায় আসেন। তারা আমার বাসাতেই থাকেন। যেহেতু আমার কোনো সন্তান নেই তাই আমার ভাগ্নে, ভাতিজি সবাইকে আমরা খুব ভালোবাসি। কিন্তু আগে স্বজনদের যেভাবে আপ্যায়ন করতাম, বাসায় যত বাজার করতাম, এখন সেটুকু বাজার করতে পারছি না। বাসায় মেহমান আসলে অতিরিক্ত বাজার খরচ লাগে, অন্তত ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ তো আছেই। এইটুকুও এখন আর দিতে পারছি না। মধ্যবিত্ত থেকে এখন যেন নিম্ন মধ্যবিত্ত হয়ে পড়েছি।'

একই কথা জানান দ্বিতীয় শ্রেণির আরেক সরকারি কর্মচারী। রাজধানীর মহাখালীতে ক্যান্সার হাসপাতালে চাকরি করেন তিনি।

ওই কর্মচারী বলেন, 'আমার ৪ সদস্যের পরিবার। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ দিতে হয়। বেতন থেকে বাসা ভাড়া কেটে নিলে থাকে ২৪ হাজার টাকা। এ দিয়ে কীভাবে সংসার চলবে?'

'হাসপাতালে বিভিন্নভাবে অনেক কর্মচারীরা অতিরিক্ত আয় করেন, দুর্নীতি করেন। তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা দুর্নীতি করেন না, সৎভাবে কাজ করেন তাদেরকে এই বেতন দিয়েই সংসার চালাতে হয়,' বলেন তিনি।

ছবি: স্টার

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এখন আগের তুলনায় কম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। বলেন, 'আগে যতটুকু বাজার করতে পারতাম এখন সেটা পারছি না। তাও নিজের ঘরে কোনোরকম খেয়ে-পড়ে থাকা যায়। কিন্তু মেহমান আসলে তাদের তো ভালো খেতে দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনে বাড়ি থেকে আত্মীয়রা ঢাকায় আসেন। কেউ ডাক্তার দেখাতে, কেউ বা পরীক্ষা দিতে। তাদেরকে ডাল-ভাত খাওয়াই কী করে?'

'সবসময়ই আত্মীয়দের সাধ্যমতো দিয়েছি। কিন্তু এখন এমনকি একটু ভালো খাওয়াতে হলেও ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার করতে হয়। বাড়িতে মেহমান আসা খুশি, আনন্দের ব্যাপার কিন্তু এখন দুশ্চিন্তিত হয়ে যাই,' বলেন তিনি।

এই কর্মচারী কলোনিতেও সবাই ১ থেকে ২ রুম ভাড়া দিয়েছেন বলে জানান তিনি। 

জানতে চাইলে সেখানকার বাসিন্দারা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতিরিক্ত আয়ের জন্য নয়, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি বলেই বাধ্য হয়ে রুম ভাড়া দিয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Ishraque's supporters padlock Nagar Bhaban

Protesters began gathering around 9:00am, blocking the main gate and occupying nearby roads

15m ago