ডেঙ্গু: হাসপাতালে বাড়ছে শিশুরোগীর সংখ্যা

গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে ০ থেকে ১০ বছর বয়সী অন্তত ৩৩৩৯ শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ছবি: স্টার

চার বছরের আয়মান শিকদারের বাবা সাইদুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের আইসিইউর সামনে ভয় আর শঙ্কা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভেতরে তার ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জীবনের জন্য লড়াই করছে।

আয়মানকে শনিবার প্রথমে মিরপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অবস্থার অবনতি হলে শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

'অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিশু হাসপাতালে আনার পরপরই ডাক্তার সাথে সাথে আইসিইউতে পাঠায়,' বলছিলেন আয়মানের বাবা সাইদুল।

রাজধানীর ষাট ফিট রোডের বারেক মোল্লার মোড়ে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত চার বছর বয়সী আলিজাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে আলিজার রক্তচাপ ক্রমাগত কমতে থাকায় তার অবস্থার অবনতি হয়।

আলিজার বাবা সাইদুর রহমান বলেন, 'গতকাল ফার্মগেটের একটি হাসপাতাল থেকে মেয়েটাকে নিয়ে শিশু হাসপাতালে এসেছি। এখানে ভালো চিকিৎসা পাবো এই আশায়। কিন্তু মেয়েটার শরীর ভালো হচ্ছে না।'

সন্তানকে নিয়ে এই উৎকণ্ঠা শুধু সাইদুল আর সাইদুরের একার নয়।

শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় রোববার ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, 'ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামলাতে আমরা রোববার একটি ডেঙ্গু সেল চালু করেছি।'

গতকাল পর্যন্ত ১৫৪ ডেঙ্গু রোগী শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে এসেছে ২৭ জন নতুন রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী অন্তত ৩ হাজার ৩৩৯ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৩৪০ জন।

সাত বছর বয়সী আজমি বিনতে আজাদের মা আফরোজা আজাদ তার মেয়ের অসুস্থতার জন্য পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের অবহেলাকে দায়ী করেছেন। আজমি বর্তমানে শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

তিনি বলেন, 'আমরা একটি সাততলা ভবনের নিচতলায় থাকি। পাশের নির্মাণাধীন ভবনের জায়গায় পানি জমে থাকলেও তা সরাতে নারাজ তারা। সিটি করপোরেশন থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।'

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ বড়দের থেকে কিছুটা আলাদা।

তিনি বলেন, 'প্রাপ্তবয়স্কদের শরীর ব্যথা এবং চোখের ব্যথাসহ হঠাৎ জ্বর অনুভব করলেও শিশুরা প্রথমে বমি বমি ভাব এবং কাশিতে ভোগে।'

নবজাতক এবং ছোট বাচ্চারা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতে পারে, বমি বমি ভাব এবং কাশিসহ জ্বর হতে পারে এবং বুকের দুধ খেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে, যোগ করেন তিনি।

বড়দের চেয়ে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার তুলনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্য ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো গুরুতর হয়ে ওঠে।

শিশুদের শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি, যা উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

'State intelligence agency' is attempting to form political party, Rizvi alleges

Doubts are growing as to whether there are subtle efforts within the government to weaken and break the BNP, he also said

2h ago