ডেঙ্গু

চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ, স্যালাইন রেশনিংয়ে এসেনশিয়াল ড্রাগস

ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় স্যালাইন রেশনিং
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেড না পাওয়ায় চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে মেঝেতে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। ৭ আগস্ট ২০২৩। ছবি: আনিসুর রহমান

চলমান ডেঙ্গু প্রকোপে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে শিরায় দেওয়া স্যালাইন রেশনিং করার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস।

নিয়মানুযায়ী, প্রায় ১ হাজার ১০০টি সরকারি হাসপাতালে শিরায় দেওয়া স্যালাইনের একমাত্র সরবরাহকারী এসেনশিয়াল ড্রাগস।

এসেনশিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি, তাই তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।'

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণনের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমরা স্যালাইন সরবরাহে রেশনিং করতে বাধ্য হয়েছি।'

এসেনশিয়াল ড্রাগস এখনো গোপালগঞ্জ প্ল্যান্টে স্যালাইন উত্পাদন শুরু করতে পারেনি, যা আগামী বছরের জানুয়ারিতে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বেক্সিমকো, ওরিয়ন ইনফিউশন, লিব্রা ইনফিউশন, অপসোনিন, পপুলার ও দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ১১ ধরনের স্যালাইন সরবরাহ করে আসছে।

বাড়তি চাহিদা মেটাতে গত ২৭ জুলাই ঢাকার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ডিজিডিএ) এক বৈঠকে এই ৬ প্রতিষ্ঠানকে দৈনিক উৎপাদন দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছিল।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাতারাতি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব নয়, তবে প্রতিষ্ঠানগুলো অবিলম্বে তাদের উত্পাদন দ্বিগুণ বা ৩ গুণ করবে বলে সম্মত হয়েছে। আমরা আশা করি, এতে করে চাহিদা মেটানো যাবে।'

২০২২-২৩ অর্থবছরে, এসেনশিয়াল ড্রাগস দেশের হাসপাতালগুলোয় প্রায় ৬০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন সরবরাহ করেছে, যা গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ ব্যাগের মতো।

এসেনশিয়াল ড্রাগসের মো. জাকির হোসেন বলেন, 'যতক্ষণ না ৬ প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বাড়াতে শুরু করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এসেনশিয়াল ড্রাগস ঢাকার হাসপাতালগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কারণ, ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।'

প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কত ব্যাগ স্যালাইন সরবরাহ করছে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেননি।

চাহিদা অনুযায়ী সব রোগীর জন্য স্যালাইন সরবরাহ আছে কি না জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের প্রতিদিন ৫০০-৭০০ ব্যাগ শিরায় দেওয়া স্যালাইন প্রয়োজন। এসেনশিয়াল ড্রাগস এখনো পর্যন্ত আমাদের চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন সরবরাহ করে যাচ্ছে।'

হাসপাতালটিতে শিরায় দেওয়া স্যালাইনসহ সব ধরনের জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর ১ সপ্তাহের মজুদ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

'প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে স্যালাইন কেনা হবে। বাজারে ১১ ধরনের স্যালাইন পাওয়া যায়। এর মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সাধারণ স্যালাইনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮০ শতাংশ,' বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোও স্থানীয় বাজার থেকে স্যালাইন সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই অপ্রত্যাশিত ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

নিয়মানুযায়ী, এসেনশিয়াল ড্রাগস থেকে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) ছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলো অন্য কোথাও থেকে কোনো স্যালাইন বা অন্য কোনো ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে পারে না। কেনা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, 'আমরা প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের জন্য এনওসির ব্যবস্থা করেছি।'

এসেনশিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল কবির জানান, গতকাল পর্যন্ত এসেনশিয়াল ড্রাগস ৩টি হাসপাতালে এনওসি জারি করেছে।

গতকাল রোববার ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩১৩ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৪ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ৬৬ হাজার ৭৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt not taking action following white paper: Economists

The makers of the white paper criticised the government for increasing value-added tax

36m ago