আজ বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস

মৌলভীবাজারে কুষ্ঠ রোগীদের ৯৮ শতাংশ চা শ্রমিক পরিবারের

মৌলভীবাজারে কুষ্ঠ রোগীদের ৯৮ শতাংশ চা শ্রমিক পরিবারের
চা শ্রমিকদের জীবনযাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেচেতন করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অপুষ্টি ও সচেতনতার অভাবের কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চা বাগানের শ্রমিকরা।

সিলেট বিভাগের সিভিল সার্জনদের মতে, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মৌলভীবাজারে প্রায় ৯৮ শতাংশ, সিলেটে ৬৫ শতাংশ এবং হবিগঞ্জে ৭২ শতাংশ চা শ্রমিক পরিবারের।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে দেশে শীর্ষে রয়েছে মৌলভীবাজার। জেলায় কুষ্ঠ রোগী রয়েছেন ৬৬০ জন। তাদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্করাই বেশি।'

সিভিল সার্জন বলেন, 'দেশের ৯টি জেলার মধ্যে মৌলভীবাজারে বেশি রোগী থাকায় এই জেলাকে কুষ্ঠ রোগের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এ রোগে আক্রান্ত ৯৮ শতাংশই চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকায়।'

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও আজ বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালন করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চা বাগান কলোনির চা শ্রমিক সাগর মনি বাউরি (৪০) প্রায় ৫ বছর ধরে কুষ্ঠ রোগে ভুগছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৫ বছর আগে আমি আমার মুখ এবং শরীরে কিছু হাইপোপিগমেন্টযুক্ত ত্বকের ছোপ দেখতে পাই। এটি ধীরে ধীরে আরও ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে, আমি রোগটি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। রোগ নির্ণয়ের পর ডাক্তাররা আমাকে বলেছিলেন, আমি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছি।'

'প্রতিবেশীরা আমার রোগের বিষয়ে জানার পর আমি তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছি,' তিনি যোগ করেন।

চা বাগানে বসবাসকারী প্রায় ১ হাজার ৪০০ চা শ্রমিক অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

৫৫ বছর বয়সী আরেক চা শ্রমিক নয়ন ইন্দোয়ার বলেন, 'একদিন আমি বাগানে কাজ করার সময় আমার ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে একটি চামড়ার ছোপ দেখেছিলাম। কয়েকদিন পর, আমার ২ পায়ে আলসারেশন দেখা দেয়। আমি দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাই। তারা রোগ নির্ণয় করে বলেন যে, আমি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত।'

তিনি বলেন, আমি নিয়মিত চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আমার রোগ দিন দিন কমছে।

মৌলভীবাজারের শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বিন বলেন, 'অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিক নিরক্ষর। তারা কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। উপরন্তু, তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হয়। এ কারণেই চা শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত।'

চা বাগান মালিকদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট চাপ্টারের চেয়ারপারসন জিএম শিবলী বলেন, 'কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত অনেক চা শ্রমিক সামাজিক কুসংস্কারের কারণে সঠিকভাবে ওষুধ ও চিকিৎসা করতে চায় না।'

সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, 'অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে মৌলভীবাজারের চা বাগানে কুষ্ঠ রোগের সংক্রমণের বড় কারণ।'

হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুরুল হক ডেইলি স্টারকে জানান, ২০২০ সালে জেলায় মোট ৩৬ জন নতুন কুষ্ঠ রোগী পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে ৮২ জন এবং ২০২২ সালে আরও ৮২ জন নতুন কুষ্ঠ রোগী পাওয়া গেছে। গত ৩ বছরে মোট ২০০ জন নতুন কুষ্ঠ রোগী পাওয়া গেছে। চা বাগান এলাকায় কুষ্ঠরোগের প্রভাব খুব বেশি।'

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরীর জানান, সিলেটে ২০২০ সালে ৩৮ জন, ২০২১ সালে ৯৩ জন এবং ২০২২ সালে ৯১ জন কুষ্ঠ রোগী পাওয়া গেছে। সিলেটের চা বাগানে মোট ২২২ জন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১৪৪ জন নতুন কুষ্ঠ রোগী আছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নূরে আলম শামীম বলেন, 'জ্ঞানের অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে চা শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

5h ago