চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব, কারণ খুঁজছে আইইডিসিআর
বন্দর নগরীর হালিশহর, পতেঙ্গা, ইপিজেড ও উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার অনেক বাসিন্দা গত ১ সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ রোগী হালিশহর, পতেঙ্গা, ইপিজেড এবং উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা, যাদের বেশিরভাগই ফৌজদারহাট এলাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিআইটিআইডি হাসপাতাল সূত্র জানায়, সাধারণত দিনে ২০ থেকে ২৫ জন ডায়রিয়ার রোগী বিআইটিআইডিতে ভর্তি হন। তবে ১৫ আগস্ট থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ১৫ আগস্ট থেকে মূলত পতেঙ্গা, হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদ ও ইপিজেড থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জন ডায়রিয়ার রোগী হাসপাতালে আসছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ৭ সদস্যের একটি দল রোববার চট্টগ্রামে এসেছে সংক্রমণ-প্রবণ এলাকার নমুনা সংগ্রহ করতে।
গতকাল রোববার হালিশহর এলাকার বাসিন্দা শাহেদ ইকবাল তার ১২ বছরের মেয়েকে বিআইটিআইডিতে নিয়ে যান।
তারা অনেক বছর ধরে ওয়াসার পানি ব্যবহার করছেন বলে জানান তিনি।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবারের কিছু সদস্যের মাঝে মাঝে ডায়রিয়া হতো। ১-২ দিন পর সেরেও যেত। কিন্তু এবার আমার স্ত্রী, আমার ছেলে ও মেয়ে একসঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে। আমার স্ত্রী ও ছেলে ৩ দিনে সুস্থ হয়ে গেছে, কিন্তু আমার মেয়ে সুস্থ হয়নি। তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।'
তারা যে এলাকায় থাকেন, তা প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম জানান, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের খবর শুনে ওই এলাকায় ওয়াসার পাইপলাইন পরীক্ষা করা হলেও কোনো পাইপে লিকেজ পাওয়া যায়নি।
আজ সোমবার বিআইটিআইডির এপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মামুন-উর-রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত দিনে ২০ থেকে ২৫ জন ডায়রিয়ার রোগী বিআইটিআইডিতে ভর্তি হন। তবে ১৫ আগস্ট থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ১৫ আগস্ট থেকে আমরা মোট ৩৩৪ জন ডায়রিয়ার রোগী পেয়েছি। তাদের মধ্যে সোমবার মোট ৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'আমরা ৮১ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করেছি। তারমধ্যে ৩৬ জনের শরীরে কলেরার জীবাণু পেয়েছি।'
তিনি বলেন, `রোগীদের বেশিরভাগই একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের। মূলত হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকার। তারা শহরের নিচু এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে আশেপাশের এলাকা তলিয়ে যায়।'
জোয়ারের পানি কোনোভাবে বাসিন্দাদের খাওয়ার পানি, রান্না এবং ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত পানিকে দূষিত করে থাকতে পারে উল্লেখ তিনি বলেন, `তবে, এটি আমাদের অনুমান। এর পিছনে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার জন্য গবেষণা হওয়া উচিত।'
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী শহরের সব বাসিন্দাকে পানি ফুটিয়ে পানি পান ও ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
এদিকে সংক্রমণ-প্রবণ এলাকায় নমুনা সংগ্রহ করতে আসা আইইডিসিআরের ৭ সদস্যের দলের সদস্য ডা. সোনম বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা ইতোমধ্যে সংক্রমণ-প্রবণ এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করেছেন।
তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি তিনি।
সিভিল সার্জন বা চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এই বিষয়ে বলার এখতিয়ার রাখেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. মো. শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, `আইইডিসিআর টিম তাদের কাজ শুরু করেছে। গবেষণা সম্পর্কে মন্তব্য করতে কিছু সময় লাগবে।'
Comments