ডায়রিয়া হলে কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

আইসিডিডিআর'বির মহাখালী হাসপাতালে ভর্তির জন্য এক ডায়রিয়া রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গ্রীষ্মের গরমের সাথে সাথে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও এর প্রকোপ বাড়ছে। রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) গত কয়েকদিন প্রতিদিন গড়ে ১২০০ এর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন, যা প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছরের ইতিহাসে একদিনে একসঙ্গে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।

বিশ্বের ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে ২০১৭ সালের আগস্টে যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটের অনলাইন সংস্করণে ছাপা এক প্রবন্ধে বাংলাদেশে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশে ডায়রিয়াজনিত কারণে এখন বছরে ৫ বছরের কম বয়সী ৩ হাজার ৮২৬টি শিশু মারা যায়। আক্রান্ত হয় প্রতি লাখে ২৭৯টি শিশু। বছরে সব বয়সী মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৮২।

২০১৮ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ডায়রিয়াজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৩১ হাজার ২৮ জন বা মোট মৃত্যুর ৪ শতাংশ। ডায়রিয়ায় মৃত্যু হারে বিশ্বের ৫৩ নম্বর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

ডায়রিয়া কী?

সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের ফলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হিসেবে রোটা ভাইরাসকে দায়ী করা হয়। এছাড়াও নোরো, ইন্টেরিক এডিনো, অস্ট্রো ও সাইটো মেগালো ভাইরাসও ডায়রিয়ার জন্য দায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ বা তার বেশিবার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে।

ডায়রিয়ার কারণ?

দূষিত পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের খাবার বিশেষ করে রাস্তার পাশের খোলা জায়গার স্ট্রিট ফুড খাওয়া। নিয়মিত হাত পরিস্কার না করে অপরিস্কার হাতে খাওয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।

ডায়রিয়া হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে নিম্নের অবস্থাগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। যেমন:

১. ডায়রিয়া দুই দিন ধরে চলছে এবং উন্নতি হওয়ার কোনো লক্ষণ না থাকলে।

২, শরীরে পানিশূন্যতা অনুভব করলে। নিজের মাঝে ক্লান্তিবোধ, ত্বক ও মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, গাঢ় রঙের প্রসাব, মনোযোগের ঘাটতি এবং মাথা ব্যথা হলে বুঝবেন আপনি পানি শূন্যতায় ভুগছেন।

৩. পেট বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যথা অনুভব করলে।

৪. পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া অথবা পায়খানার রঙ কালো হলে।

৫. শরীরে ১০২ ডিগ্রি ফরেনহাইট (৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর ওপরে জ্বর দেখা দিলে।

শিশুদের ডায়রিয়া হলে পানিশূন্যতায় খুব দ্রুত শিশুদের শরীরের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় কোনো উন্নতি দেখা না দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে যা করবেন?

১, ঘন ঘন হাত ধোয়া। যে কোন খাবার হাতে নেওয়ার আগে, হাঁচি, কাশি অথবা নাকে হাত দেবার পরেও হাত ধোয়া। হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সাবান অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য আপনার হাত একসাথে ঘষুন।

২. রাস্তার পাশের শরবত, পানি, যানবাহনে খোলা অবস্থায় বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ফল, খাবার ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকা।

৩. যে খাবারটি খাচ্ছেন সেটি পচা-বাসি খাবার কিনা সে বিষয়ে সচেতন থাকা।

৪. বিশুদ্ধ পানি পান করছেন কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখা। 

৫. হাতের নখ কেটে সব সময় ছোট রাখার চেষ্টা করা। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে তারা যেহেতু বাইরে খেলাধুলা করে, ঘরের ছোট ছোট জিনিস হাতে নিয়ে মুখে দেয়।

৬. শিশুরা তাদের স্কুলের সামনে রাস্তার পাশে অপরিস্কার বা খোলা অবস্থায় তৈরি করা বিভিন্ন খাবার খাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখা।

কামরুজ্জামান নাবিল, শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English
A freedom fighter’s journey to Mujibnagar

Who is a freedom fighter

The government's move to redefine freedom fighters has been at the centre of discussion

22m ago