বিশ্ব মশা দিবস

মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই, দাবি বিশেষজ্ঞদের

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চলতি বছরে দেশে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ২২৮ জন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫৮১ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২ জন রোগী।

এরই মধ্যে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মশা দিবস।

বিশ্বব্যাপী মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য প্রতিবছর ২০ আগস্ট দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৩০ সাল থেকে 'বিশ্ব মশা দিবস' পালিত হয়।

এর আগে দীর্ঘদিন গবেষণার পর ভারতীয় মেডিকেল সার্ভিসের মেডিকেল অফিসার রোনাল্ড রস ১৮৯৭ সালে প্রমাণ করেন অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া পরজীবী বহন করতে পারে। তিনি ২০ আগস্ট তার আবিষ্কারের এই দিনটিকে 'মশা দিবস' বলে অভিহিত করেন। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন তার আবিষ্কারের তাৎপর্য তুলে ধরতে ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবসের নামকরণ করেন।

বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা, ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস উল্লেখযোগ্য। 

মশাবাহিত অন্যান্য রোগের তুলনায় বাংলাদেশে মূলত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর হিসেব করা হয়। প্রথম বছরেই ডেঙ্গুতে মারা যান ৯৩ জন এবং আক্রান্ত হন ৫ হাজার ৫৫১ জন। দেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ২০১৯ সালে। সেবছর সরকারি হিসেবে ডেঙ্গু জ্বরে ১৫৬ জনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। গত বছর দেশে ডেঙ্গু জ্বরে মারা যান ১০৫ জন এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন।

ডেঙ্গুর পাশাপাশি দেশে ম্যালেরিয়া রোগের প্রভাব রয়েছে। গত বছর দেশে মোট ৭ হাজার ২০১ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে শনাক্ত রোগী ছিল ৬ হাজার ১০৪ জন। মারা যায় ৭ জন।

কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'বাংলাদেশে কী পরিমাণ লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তার প্রকৃত হিসেব পাওয়া যায় না। আমরা কেবল ৪০টির মতো হাসপাতালের তথ্য পাই। কিন্তু এর বাইরেও অসংখ্য রোগী অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং অনেকই বাসায় চিকিৎসা নেন। কেউ আবার পরীক্ষাই করান না। মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের এখানে তেমন কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয় না।'

ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে ফুলহাতা শার্ট, হাতে পায়ে মোজা, দিনে মশারির ভেতর ঘুমানো এবং অফিসে প্রতিদিন সকালে অ্যারোসেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই কীটতত্ত্ববিদ। পাশাপাশি যে এলাকায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাবে সেখানে ক্রাশ কর্মসূচি চালানোর কথা বলেন তিনি।

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, 'মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা কতটা সফল তা বুঝা যায় দেশে মশাবাহিত রোগ কেমন হয়। আমাদের দেশে এখনো মশাবাহিত রোগীর সংখ্যা বেশি। মশা নিয়ন্ত্রণে সফল কতটা হলাম তা মূল্যায়ন কমিটি বলতে পারবে। তবে দুঃখজনক হলো আমাদের দেশে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই ধরনের কোনো মূল্যায়ন কমিটি নেই। আর কেন এই কমিটি করা হচ্ছে না তা আমার জানা নেই।'

মশা নিয়ন্ত্রণে তদারকি কমিটির কার্যক্রম বাড়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি মূল্যায়ন কমিটি করার পরামর্শ দেন তিনি। মূল্যায়ন কমিটির কারণে আমরা মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে আছি বলেও জানান তিনি।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ফ্যাকাল্টি ড. জিএম সাইফুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মশা নিয়ন্ত্রণে মূল সমস্যা হলো আমরা অনেক তৃপ্তিতে ভোগী। আমাদের ব্যবস্থাপনাকে রোল মডেল বলা হয়। আমরা কিছু না করেই বেশি বেশি প্রচার করি। এবছর বৃষ্টি নিয়মিত না হওয়ায় ডেঙ্গু কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে সিটি করপোরেশন এটা তাদের সাফল্য বলে প্রচার করে। যদিও তারা এডিস মশা নিধনে তেমন কোনো কাজেই ভালোভাবে করেনি। মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় সেগুলো করা হয় না। মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ও প্রকৃত জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে।'

জিএম সাইফুর রহমান বলেন, 'কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের যথেষ্ট কীটনাশক নেই। যে ফগিং করা হয় তাতে কিন্তু তেমন একটা মশা মরে না। এডিস মশার জন্য যে সব কীটনাশক প্রয়োজন তা নেই আমাদের। মাঝেমধ্যে ভয় দেখানেরা জন্য কিছু কাজ করা হয়। কিন্তু সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেটি করা হয় না। ফলে মশা বাড়ছে।'

এই কীটতত্ত্ববিদের মতে, আমরা যে রোগী পাই তা ২০ শতাংশের মতো। অধিকাংশই বাসায় বসে চিকিৎসা নেন। কেউ আবার পরীক্ষাও করে না। ফলে প্রকৃত চিত্রটি আমরা পাই না। আমাদের তদারকি ও মূল্যায়ন করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি দল দরকার। সেটি নেই।

'ম্যালেরিয়ার প্রকোপ একটু কম। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই রোগী বেশি পাওয়া যায়। ম্যালেরিয়ার বাহক হলো অ্যানোফিলিস মশা। এটি স্বচ্ছ পানিতে হয়। জ্বর দেখে এটি শনাক্ত করা হয়। ওষুধ খেলেই ম্যালেরিয়া সেরে যায়। সরকার ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। অ্যানোফিলিস মশা মূলত রাতেই বেশি কামড়ায়। তবে দিনেও কামড়াতে পারে, তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

9h ago