সাগরে আবারও লঘুচাপের সম্ভাবনা, বৃষ্টি-ঘূর্ণিঝড় নিয়ে যা জানা গেল

প্রতীকী ছবি

অক্টোবরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলেও, সারা দেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে রংপুর বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক ছিল।

বর্ষার শেষ সময়ে এসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঝরছে বৃষ্টি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬টা পর্যন্ত যশোরে সর্বোচ্চ ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই সময় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ২০ মিলিমিটার।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ওয়েস্টার্ন ডিসটার্বেন্সের কারণে এই বৃষ্টি। সেই সঙ্গে রয়েছে দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাব। সাগরও উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামীকালই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসবে।'

নিম্নচাপটি ভারতের তামিলনাড়ু, দক্ষিণ অন্ধ্র উপকূলের দিকে চলে যাওয়ার পরপরই নতুন একটি লঘুচাপের সম্ভাবনার কথা জানা গেল।

মাসের শুরুতেই দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল অক্টোবরে বঙ্গোপসাগরে একটি থেকে তিনটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, অক্টোবর মাসে এই অঞ্চলে ১৮৯১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩২ বছরে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ৫১টি এবং অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ৪৩টি।

এর মধ্যে বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের উপকূল অতিক্রম করেছে ১৯টি। আটটি ঘূর্ণিঝড় এবং ১১টি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণত বাতাসের গতিবেগ হয় প্রতি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বাতাসের গতি ৮৯ থেকে ১১৮ কিলোমিটার থাকলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের গতি ১১৯ থেকে ২১৯ পর্যন্ত অতি প্রবল এবং প্রতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি থাকলে সুপার সাইক্লোন বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুসারে, আগামী ২১ কিংবা ২২ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও এর আশে পাশের এলাকায় একটি ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হতে পারে। এটি শক্তি অর্জন করে লঘুচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, এই লঘুচাপ আরও শক্তি অর্জন করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। অক্টোবরে এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

লঘুচাপ শক্তিশালী হয়ে পর্যায়ক্রমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ, এর পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। কোনো কোনো সময় লঘুচাপ থেকেই কিংবা নিম্নচাপ হয়ে বিলীন হয়ে যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হওয়ার পরে বোঝা যাবে এটি আদৌ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না। সে জন্য আরও অন্তত দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পরে ঘনীভূত হয়ে যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তাতে তিন-চার দিন সময় লেগে যায়। তবে অক্টোবরে ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হয়ে শক্তি বাড়াতে শুরু করলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।'

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে 'দানা'। এটি কাতারের দেওয়া নাম।

জাতিসংঘের বিশেষায়িত বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে।

আরএসএমসির সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাবিত নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠানো হয়।

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা অনুমোদন করে ডব্লিউএমও/এসকাপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস। এই কমিটিতে আছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ওমান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

4h ago