দখল-দূষণে মরছে নদী
নদীগুলো যেন আর বেঁচে নেই, কেবল অস্তিত্বটুকু রয়ে গেছে। যে অদম্য জীবনের ব্যাপ্তি ছিল তার, ছুটে চলার আনন্দ আর ঘূর্ণিপথের বাঁকে বাঁকে যে রহস্যময়তা তা যেন কেবল কবিতা, গান আর সাহিত্যের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। ২০১৯ সালের এক রায়ে নদীকে 'জীবন্ত সত্তা'র আইনি মর্যাদা দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু বাস্তবে দখল, দূষণ, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে দেশের প্রায় সব নদী টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আমরা হালদা (চট্টগ্রাম), ময়ূর (খুলনা), সোনাই (সিলেট) ও লৌহজং (টাঙ্গাইল) নদীর বর্তমান অবস্থা এবং কীভাবে এক সময়ের বিশাল এই নদীগুলো লোভ আর অবহেলার কাছে জিম্মি হয়ে গেল, তাই দেখার চেষ্টা করেছি।
লোভের কাছে জিম্মি হালদা
সেফায়েত উল্লাহ, চট্টগ্রাম
২০১৮ সালে তোলা একটি স্যাটেলাইট ইমেজ দেখলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হালদা নদীর তীরবর্তী ফকিরা চান এলাকায় একটি সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাবেন।
তবে সময় পেরিয়ে সামনে এলে ২০২৪ সালে একই দৃশ্যপটে ঘটে গেছে বড় পরিবর্তন।
একই এলাকায় এ বছর তোলা স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায় সবুজের শূন্যতা এবং পরিবেশগত ক্ষতির চিহ্নসহ অনুর্বর এক ল্যান্ডস্কেপ।
গত চার বছর ধরে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্বিচারে ও অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের কারণে নদী তীরের আরও কয়েকটি পয়েন্টে একই অবস্থা, যা নদীর তীরকে অরক্ষিত ও ভাঙনের ঝুঁকিতে ফেলেছে।
মাটি উত্তোলনকারীরা কেবল মাটি উত্তোলনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি, তারা যোগিনী ঘাট এলাকায় ট্রাক ব্যবহার করে মাটি পরিবহনের জন্য একটি সেতু পর্যন্ত নির্মাণ করেছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইনসহ বিভিন্ন আইন অমান্য করে দুর্বৃত্তরা হালদা নদীর পাড়কে মাটি উত্তোলন ও বালুমহলসহ বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনের একটা কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
কার্প জাতীয় মাছের প্রজাতির জন্য দেশের প্রধান প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদাকে ২০২০ সালে মৎস্য ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সরকার পরবর্তীতে নদী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাছ ধরা, মাটি উত্তোলন, পানি উত্তোলন, মোটর-বোট চলাচল, বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই প্রতিবেদক দেখতে পান, শ্রমিকরা নদীর পাড় বরাবর মাটি উত্তোলন করার সময় ট্রাকের কারণে বিভিন্ন স্থানে মাটি নিয়ে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই ট্রাকগুলো বিভিন্ন স্থানে এসব মাটি নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বলেন, 'ওসমান গণি, বদিউল আলম ওরফে বদি মেম্বার, মো. আজগর ও তাদের সহযোগীদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট এই অবৈধ মাটি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত।'
তিনি বলেন, 'সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।'
ফকিরা চাঁন এলাকার বাসিন্দা আরমান হোসেন বলেন, 'এসব মাটি সাধারণত ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়।'
হালদা গবেষক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর তীর ধ্বংস হয়ে ভাঙনের মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে, যা নদীতে পলি জমার কারণে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং নদীর ভূ-প্রকৃতি পরিবর্তন করবে।
যোগাযোগ করা হলে ওসমান গণি বলেন, 'আমি সেখানকার কিছু এলাকা থেকে মাটি উত্তোলন করলেও এখন আর করি না। আমি এখন অন্য ব্যবসায় আছি।'
বদিউল আলম দাবি করেন, 'ক্রেতাদের অনুরোধে আমি যারা মাটির তোলে তাদের কাছ থেকে মাটি কিনেছি। কিন্তু আমি কখনোই নদীর ধার থেকে মাটি তোলায় ছিলাম না।'
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়েই বর্তমানে উপজেলায় অন্তত ৫০টি ইটভাটা চালু আছে।
চট্টগ্রামের ইট ভাটা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. ইসমাইল বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের সদস্যদের হালদা নদীর তীর থেকে মাটি না কেনার নির্দেশ দিয়েছি।
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, শিগগিরই এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হবে।
এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধমূলক এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।
চট্টগ্রামের বিডব্লিউডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী সওকত ইবনে শাহেদ বলেন, 'হালদা নদীর তীর থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। নদীর তীর ও বাঁধ এলাকা থেকে মাটি উত্তোলন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা দোষীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।'
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আব্দুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে এবং আমরা মাটি উত্তোলনকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।'
লৌহজং নদী: গৌরবময় অতীতের ছায়া
মির্জা শাকিল, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের লৌহজং নদী এখন অব্যাহত দখল আর দূষণের কারণে আসন্ন মৃত্যুর অপেক্ষায়।
টাঙ্গাইল সদরের বৈষ্ণববাড়ি এলাকার ধলেশ্বরী নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি জেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মির্জাপুরের বংশাই নদীতে পড়েছে।
কয়েক দশক আগেও লঞ্চ এবং পণ্য বোঝাই নৌকা এই নদীতে চলাচল করত, যা এলাকাটিকে ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করেছিল। এ ছাড়া স্থানীয়রা কৃষিকাজ, গৃহস্থালীর কাজ ও মাছ ধরার জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে নদীটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে।
১৯৯২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড লৌহজং ও ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে একটি স্লুইস গেট নির্মাণের ফলে নদীটির বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধের কারণে পলির স্তর পড়ে এর প্রাকৃতিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত করে এবং এর নাব্যতা হ্রাস পায়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় নৌকা ও লঞ্চগুলো নদীতে চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং দুর্বৃত্তরা নদী তীর দখল করে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করে।
এদিকে, স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এবং নদীতে অপরিকল্পিতভাবে কলকারখানা ও টেক্সটাইল মিলের আবর্জনা ফেলায় জলাশয়টিকে আরও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইলের তারাটিয়ার বিসিক শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইউনিট ও ক্ষুদিরামপুর এলাকার একটি টেক্সটাইল মিলের বিষাক্ত বর্জ্য ও অপরিশোধিত বর্জ্য এবং আশপাশের পার্ক মার্কেটের বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে।
বেরাডোমা এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'নদীটি একটি নোংরা অগভীর খালে পরিণত হয়েছে, এটি মশার প্রজনন ক্ষেত্র। এর পানির দুর্গন্ধ অসহনীয়।'
২০১৬ সালে জেলা প্রশাসন নদীর দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়।
সদর উপজেলায় পৌর এলাকায় নদীর তিন কিলোমিটারের মধ্যে ২৬০টিসহ সাড়ে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে, কয়েকটি অস্থায়ী কাঠামো অপসারণের পরে এই অভিযান স্থগিত করা হয়।
চার বছর পর ২০২০ সালে অভিযান আবার শুরু হয়েছিল। শুধুমাত্র নদীর সীমানা নির্ধারণ এবং দখলকারীদের চিহ্নিতকরণ নিয়ে বিতর্কের কারণে আবার তা স্থগিত করা হয়।
এদিকে নদীর এই অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা খনন ও নগরীতে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা স্থাপনের মাধ্যমে নদীটিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির আহ্বান জানান।
যোগাযোগ করা হলে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়সারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন।
ময়ূর নদ: বাঁধে অভিশপ্ত নদী
দীপংকর রায়, খুলনা
খুলনায় ময়ূর নদের ওপর দুটি সেতু নির্মাণে বাঁধের কারণে এর পানি ধীরে ধীরে শুকিয়ে এটি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
৩০ ফুট চওড়া বাঁধে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের পশ্চিম দিকে স্থাপিত একটি মাত্র তিন ফুট চওড়া পাইপ কিছু পানি প্রবাহিত হতে পারে, যা নদীর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয়।
খুলনা শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি একসময় রূপসা নদীর সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু নদীতে ইতিপূর্বে স্থাপন করা স্লুইস গেট দিয়ে এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, পাশাপাশি এর জোয়ার-ভাটাও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
বাঁধটি এখন নদীর দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে আগে যে দুটি সেতু ছিল সেগুলো ভেঙে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নতুন করে বাস্তবায়নে গত বছরের ১২ অক্টোবর সেতু দুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে।
ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি নির্মাণ সংস্থাকে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্টিল-আর্চ সেতু নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে।
পরিবেশবাদীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে বাঁধের কারণে নদীর প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
তবে একই সময়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে দ্বিতীয়বারের মতো ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর একটি অংশ খনন করছে। এটি এর আগে ২০১৪ সালে নদীর ৫ দশমিক ৯ কিলোমিটার ড্রেজিং করেছিল।
বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, 'নদীর অনেক অংশ অবৈধভাবে দখল হওয়ায় নদী উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। বাঁধ ও স্লুইস গেটের কারণে এক অংশ থেকে এর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পলি জমে এর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে এবং অন্য অংশে কেসিসি খনন করছে।'
তিনি বলেন, 'এটি সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্বিচারিতার একটি উদাহরণ মাত্র।'
'এছাড়া নির্মাণ শ্রমিকরা নদীর তীরে খনন করা মাটি দ্রুত অপসারণ না করে ফেলে রাখছে, যা ধীরে ধীরে সেখানে জমা হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট করে এর প্রবাহকে আরও বাধাগ্রস্ত করবে। তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা এই অবস্থা দেখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি,' বলেন তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, আপাতত নির্মাণ সামগ্রী সেখানে রাখা হয়েছে এবং শিগগিরই সরিয়ে ফেলা হবে।
তিনি বলেন, বাঁধের মধ্য দিয়ে নদীতে পানি প্রবাহিত করার জন্য একটি পাইপ বসানো হয়েছে।
বিপদে সোনাই নদী
মিন্টু দেশোয়ারা, হবিগঞ্জ থেকে
একসময় ছোট ছোট মাছ ধরার ডিঙ্গি সোনাই নদীর তীরে ভিড় করত আর গ্রীষ্মের গরমের দিনগুলোতে শিশুরা এর শীতল পানিতে ডুব দিত।
তবে সেই দিনগুলো এখন অতীতের খাতায়।
নদীর তীরে সবুজ চারণভূমি, চাঁদের আলোয় ঝিকিমিকি পানি, নৌকা-ট্রলারের কোলাহল, বাচ্চাদের হাসি-আনন্দ—কিছুই এখন আর নেই।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী, যা একসময় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, এটি এখন নিছক এক খালে পরিণত হয়েছে। দখলদার আর দূষণকারীদের খপ্পরে শেষ নিঃশ্বাস গুনছে।
স্থানীয়রা আঞ্চলিক এই নদী ধ্বংসের জন্য নদী দখলকারীদের দুষছেন।
পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে নদী রক্ষায় উদ্যোগ নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে তাগিদ জানিয়ে আসছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দেখেও না দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা মুখলেছুর রহমান জানান, উপজেলা শহর ও কাঁচাবাজার থেকে প্লাস্টিক ও বর্জ্য এবং বাজার থেকে পয়ঃবর্জ্য নদীতে প্রবেশ করায় মেরিন ইকোসিস্টেম টিকিয়ে রাখতে পারছে না।
উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবু আসাদ ফরিদুল হক জানান, এক সময় এই নদীতে প্রচুর মাছ ছিল।
তবে বিষাক্ত কালো পানির কারণে এর মাছের সংখ্যা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
একদিকে নদীর জমি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো এটিকে সংকীর্ণ করে ফেলছে অন্যদিকে নদীর তীরে ফেলা বর্জ্য এর শ্বাসরোধ করছে।
একই কথা বলেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, নদীর পানি সেচের জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, ফলে আশেপাশের ফসলি জমিতে চাষাবাদ করা কৃষকদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ফলে ফলন ও ফসলের গুণগত মান দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মাধবপুর বণিক সমিতির সভাপতি মনোজ কুমার পাল বলেন, 'আমরা ব্যবসায়ীদের নদীতে বর্জ্য ফেলতে নিষেধ করেছি, কিন্তু কেউ কথা শুনছে না। এই নদীকে বাঁচাতে হবে, কিন্তু মনে হয় কেউই এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না।'
নদীর দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিতে নির্দিষ্ট কোনো বর্জ্য ফেলার স্থান না থাকায় পৌরসভা কর্মীরা বছরের পর বছর ধরে নদীর তীরেই গৃহস্থালী বর্জ্য ফেলছেন।
মাধবপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক বলেন, 'সরকারের কাছ থেকে এখনো বরাদ্দ পাইনি, তবে আশা করছি এ বছরের মধ্যেই পাবো। বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান হলে নদীতে আর ফেলা হবে না।'
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত বিন কুতুব বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন আন্তরিক। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
Comments