জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিশুদের উদ্যোগ 'গ্রিন কর্নার'

প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার না করা, শক্তির অপচয় রোধ, খাদ্য সচেতনতাসহ শিশুদের হাতে লেখা আরও অনেক পরিবেশবাদী অঙ্গীকারের দেখা মিলবে এই গ্রিন কর্নারে রাখা পোস্টারগুলোতে।
গ্রিন কর্নারে পরিবেশ সচেতনতামূলক পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় 'গ্রিন কর্ণার' নামে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে মানিকগঞ্জের আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিশুরা। 

ক্লাসরুমের ভেতর একটি স্থান নির্বাচন করে সেখানে গাছের জন্য জায়গা রেখে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উদ্যোগ এটি। তাছাড়া প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার না করা, শক্তির অপচয় রোধ, খাদ্য সচেতনতাসহ শিশুদের হাতে লেখা আরও অনেক পরিবেশবাদী অঙ্গীকারের দেখা মিলবে এই গ্রিন কর্নারে রাখা পোস্টারগুলোতে।

শুধু অঙ্গীকারেই সীমাবদ্ধ নয় শিশুরা৷ অঙ্গীকার মেনে চলছে তারা, উদ্বুদ্ধ করছে পরিবারের সদস্যদের, খেলার সঙ্গীদেরও।

এই কাজগুলো করছে সপ্তম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে আছে সানিয়া, আতিকা, রাইসা, সাওদা, সামিহা, সামিয়া, সারা, রুযিতা, রুহি, নাযিবা, মোহনা, ধ্রুবা, রাইমাসহ আরও অনেকে।

গ্রিন কর্নারের বিষয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রাইসা দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'ক্লাসরুমের গ্রিন কর্নার চিহ্নিত জায়গায় আমরা অনেকগুলো গাছ এনে রেখেছি এবং পরিচর্যা করছি। আমাদের উদ্যোগের পেছনে মূল কারণ হলো গাছ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। যাতে মানুষ গাছের গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে পারে।'

সাওদা ইসলাম অথৈ বলে, 'গ্রিন কর্নার দেওয়াতে আমি গাছকে ভালোবাসতে শিখেছি এবং অনুভব করতে পারি গাছেরও জীবন আছে। আমার মনে হয় জীবন্ত গাছগুলো আমাদের সঙ্গে বসে ক্লাস করছে। বলতে পারি, আমি আগের চেয়ে পরিবেশের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হয়েছি।'

শিশুদের পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের বাইরে পরিবেশ নিয়ে এমন সচেতনতা ও তৎপরতার প্রশংসা করছেন অভিভাবকরাও।

গ্রিন কর্নারে রাখা গাছ। ছবি: সংগৃহীত

এ ব্যাপারে সানিয়ার বাবা সামিউল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রিন কর্নারের মতো সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা আগামীর সবুজ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। এটা ভেবে অভিভাবক হিসেবে আমি অনেক খুশি।'

'বাচ্চার ভেতর একটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখছি। গাছ, পরিবেশ সম্পর্কে তাদের সংবেদনশীলতায় পরিবর্তন আসছে। তারা অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করছে এবং গাছের তাৎপর্য সম্পর্ক জানাচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

এই গ্রিন কর্নার তৈরির ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়ন ও সহায়তা করেন প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক সমন্বয়ক মো. আব্দুর রশিদ এবং ইংরেজি শিক্ষক সাবিদ মাহমুদ।

এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্পর্কে সাবিদ মাহমুদ বলেন, 'আমি আশা রাখি শিক্ষার্থীদের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ বাংলাদেশের অন্যান্য স্কুলেও ছড়িয়ে পড়বে। যদি আরও বেশি সংখ্যক স্কুলে এমন গ্রিন কর্নার তৈরি করা সম্ভব হয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা সচেতন হতে পারবে।'

ক্লাসরুমে গ্রিন কর্নার তৈরির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবেশবিদরা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ডিপ ইকোলজি এ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম। সর্বশেষ কপ-২৭ এও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শিশু ও তরুণদেরকে পরিবর্তনের ''এজেন্ট'' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আকিজ ফাউন্ডেশনের শিশু শিক্ষার্থীদের এই চর্চা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরিতে ভূমিকা পালন করবে।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এ এইচ এম সাদাৎ বলেন, 'স্কুলে গ্রিন কর্নার অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি বাচ্চাদেরকে পরিবেশ সচেতন করতে ভূমিকা রাখবে। আধুনিক বিশ্বে পরিবেশ ধ্বংস করে যে উন্নয়ন, এটা সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ পরিবেশ ধ্বংস করে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছি এখন। ছোট বয়স থেকেই শিশুরা এসব সম্পর্কে সচেতন হলে বড় হয়ে এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।'

Comments