‘বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার’

‘বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার’
আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কারস ফেডারেশন, ইনসিডিন বাংলাদেশ, জনউদ্যোগ এবং সাউথ এশিয়ান অ্যালান্স ফর পোভার্টি ইরাডিকেশনের (স্যাপি) যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

আইন অমান্য করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার সামুদ্রিক মাছ আহরণ করছে বঙ্গোপসাগরে। এর ফলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি উপকূলীয় জেলেদের জীবন-জীবিকা ও কর্মপরিবেশ সংকটাপন্ন হচ্ছে।

জেলে ও সামুদ্রিক খাদ্য সেক্টরের শ্রমিকদের অবস্থা বিষয়ক আঞ্চলিক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ৪০ মিটারের ভেতরে এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ৪০ মিটারের বাইরে মাছ আহরণের কথা থাকলেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার ৪০ মিটারের ভেতরে নিয়মিত মাছ আহরণ করছে, যা সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ক্ষেত্র।

একেকটি বড় আকারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার প্রতি ট্রিপে ৪০০ টনের মতো মাছ আহরণ করতে পারে, যা বড় যান্ত্রিক নৌকার ২০ গুণেরও বেশি।

আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কারস ফেডারেশন, ইনসিডিন বাংলাদেশ, জনউদ্যোগ এবং সাউথ এশিয়ান অ্যালান্স ফর পোভার্টি ইরাডিকেশনের (স্যাপি) যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এ বিষয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার জেলে এবং সামুদ্রিক খাদ্য সেক্টরের শ্রমিকদের দুর্দশা বিষয়ক একটি গবেষণার মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এ গবেষণা চালিয়েছে স্যাপি।

বাংলাদেশ অংশের গবেষক মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, 'সমুদ্রে অতি আহরণ সামুদ্রিক মৎস্যখাতের জন্য বড় একটি ক্ষতি। বর্তমানে ২০০টিরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার এবং ৬৮ হাজার দেশীয়-ইঞ্জিনচালিত নৌকা মাছ শিকারে ব্যবহৃত হয়। ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের সংখ্যা ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বেআইনিভাবে সাগরের তলদেশে মাছ আহরণ করায় সামুদ্রিক-বাস্তুসংস্থানেরই ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি জেলে ঝুঁকির মধ্যে সম্প্রদায়ের জীবিকাকে ফেলছে। এর ফলে মোট মৎস্য-সম্পদের স্টক কমছে।'

স্যাপির কমিউনিকেশন এন্ড মনিটরিং অফিসার রেশমা সায়কা বলেন, 'মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে নারী ৭০ শতাংশ। এখানে নারী শ্রমিকরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। তাদের কর্মপরিবেশ অস্বস্তিকর। তাদের নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এদিকে, একই কাজ করে পুরুষ ৮০০ টাকা মজুরি পেলেও নারী শ্রমিক ৩৫০ টাকা পেয়ে থাকে।'

বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, 'নৌযানে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম, দিক-নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি বাধ্যতামূলক করতে হবে। সামুদ্রিক মৎস্যখাতের অন্যায্য ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধে সরকারকে যথাযথ আইন প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে। নারী জেলে, শ্রমিকদের সাংগঠনিক বিকাশে এবং প্রয়োজনে এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা প্রদান করতে হবে। ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী, চিংড়ি চাষিদের জন্য লাভজনক ন্যূনতম মূল্য ঘোষণা করতে হবে।'

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, 'জেলেরা বিভিন্ন ভাবে ভ্যাট ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও সরকারের নজর কম। মৎস্যখাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে থাকে। নির্মাণ শ্রমিকের থেকেও বেশি ঝুঁকি এ খাতে। মাছ ধরার ট্রলারগুলোরে লাইফ-জ্যাকেট, পর্যাপ্ত বয়া, দিক নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি থাকে না। জেলেরা গভীর সাগরে আকাশের তারা দেখে দিক নির্ণয় করেন। আবার ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। নানা কারণে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবে জেলেদের মৃত্যু হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধিত জেলেদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সরকারের নীতি অনুযায়ী মাছ ধরার সময় কোনো জেলে নিখোঁজ হলে বা মারা গেলে পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে পঙ্গু ব্যক্তিদের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার বিধান আছে। তবে নিবন্ধন জটিলতার কারণে এ সরকারি সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা।'

আইনজীবী মলয় ভৌমিক বলেন, 'এদেশে জেলেদের নিজেদের বলতে কিছুই নেই। তাই সরকারের উচিত লিজ প্রথা বাতিল করে দেওয়া। জাল ও নৌকা না থাকায় জেলেরা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে। এরজন্য তারা নৌকার মালিকের কাছ থেকে আগাম-ঋণ বা দাদন নিয়ে থাকেন। এতে আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র থাকে না। দাদনের বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করেন। তখন জেলেরা মালিকের কাছে বাঁধা থাকেন। স্বাধীনতা, মজুরি ও শ্রমবিষয়ক দরকষাকষির সুযোগ কমে যায়। পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য জেলেদের মাছ ধরার মৌসুমের শুরুতে দাদন নিতে হয়। সাধারণত নৌকার মালিক সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ ভাগ ভাগ পায়। নৌকার মাঝি বাকি অর্ধেকের ৩৩ ভাগ পায়। আর বাকি ১৭ ভাগ সব জেলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে জেলেদের আয় অনিশ্চিত থাকে, ফলে তারা দাদনের শৃঙ্খলে আটকে থাকে।'

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক ও স্যাপি'র কোর কমিটি সদস্য শাহনাজ সুমী। সামুদ্রিক খাদ্য সেক্টরের বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে ন্যায্য মূল্য, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করাসহ দাদন প্রথা বন্ধের দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশসহ পাকিস্তান, শ্রীলংকার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে কক্সবাজার, বরগুনা, নোয়াখালী, নিলফামারীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে জেলে, মৎস্য সমিতির প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়নের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago