রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে পারমাণবিক জ্বালানি লোড নভেম্বরে

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) লোড করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই দেশের প্রথম পারমাণবিক প্রকল্পে প্রথমবারের মত ফুয়েল লোড শুরু করা হবে।
পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানোর মধ্যে দিয়েই প্রকল্পের কমিশনিংয়ের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে যাবে। নভেম্বরে ফুয়েল লোড শুরু হলে এ বছরের শেষেই রূপপুর প্রকল্পের সূচনা (স্টার্ট আপ) হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি প্রকল্পের স্টার্ট আপের দিনক্ষণ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রস্তুতি নেওয়া হলেও নির্দিষ্ট সময়ে ফুয়েল লোড করা এবং চূড়ান্ত স্টার্ট আপের পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের প্রথম পারমাণবিক প্রকল্পটি।
রূপপুর প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রূপপুর প্রকল্পের উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতে ১০ আগস্ট আইএইএর শীর্ষ পর্যায়ের ১৪ সদস্যের প্রি-ওসার্ট (পারমাণবিক প্রকল্পের উৎপাদন শুরুর আগের পর্যবেক্ষণ) দল বাংলাদেশে আসবে।
আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার পর আইএইএর রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলা জানান প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
রূপপুর প্রকল্প ও আণবিক শক্তি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, উপুড় প্রকল্প ইতোমধ্যে তিন বছর পিছিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়া চুক্তি নবায়ন করেছে।
চুক্তি নবায়নের পর উপুড় প্রকল্পে জ্বালানি লোড করা ও প্রকল্পের উৎপাদন শুরু করার জন্য নতুন শিডিউল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে নতুন শিডিউল করার কথা থাকলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি লেভেল-১-এর শিডিউল।
নতুন শিডিউল চূড়ান্ত না হলেও আগামী ৬ নভেম্বর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে জ্বালানি লোডের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করে উৎপাদন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক করতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
উপুড় প্রকল্পের সাইট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'নভেম্বরে জ্বালানি প্রবেশ করানোর লক্ষ্য নিয়েই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা সম্পন্ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক যন্ত্রাংশের পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।'
রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জন্য কয়েক হাজার পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে, এর মধ্যে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের নিরাপত্তার জন্য উচ্চ বাষ্প চাপে নিরাপত্তা ঝুকি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নভেম্বরে জ্বালানি লোড করার টার্গেট নিয়েই এসব পরীক্ষা চলমান রয়েছে। জ্বালানি লোডের আগেই সব পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রকল্পের এই কর্মকর্তা।
চুল্লিতে পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানোর ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে বলে জানান তিনি। ফলে নভেম্বরের শুরুতে জ্বালানি লোড করতে পারলে ডিসেম্বরের শেষেই উৎপাদনে যেতে পারে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।
তবে স্টার্ট আপের (উৎপাদন শুরু) প্রায় তিনমাস পর থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে এবং পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে প্রায় ১০ থেকে ১১ মাস পর্যন্ত সময় লাগবে।
ফলে এ বছরের শেষে প্রথম ইউনিট চালু হলেও প্রথম ইউনিটের পুরোপুরি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ ২০২৬ সালের শুরুতে হবে।
রূপপুর প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক ড. কবির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রূপপুর প্রকল্পকে উৎপাদনে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আইএইএর পর্যবেক্ষণ রিপোর্টের ওপর।'
রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জানান, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আগস্টে ১৪ সদস্যের প্রি-ওসার্ট টিম রূপপুর প্রকল্প পরিদর্শনে আসবে। তারা আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক দিক এবং নিরাপত্তার প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করবেন।
আইএইএর রিপোর্ট পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পাবনার রূপপুরে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি চুল্লি স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর এবং ইউনিট-২ এর উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর।
তবে দেরিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়া, পরবর্তীতে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়েছে।
চুক্তি নবায়নের পর প্রথম ইউনিট হস্তান্তরের সময় ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং ইউনিট-২ হস্তান্তরের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
তবে এ সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে হলে নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনে শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments