পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ২৬ জুন থেকে পুনরায় চালুর সম্ভাবনা

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ২৬ জুন থেকে পুনরায় চালুর সম্ভাবনা
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি: স্টার

কয়লা সংকটের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আগামী ২৬ জুন থেকে পুনরায় উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এ কেন্দ্রটির জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবোঝাই ৬টি জাহাজ ইতোমধ্যেই রওনা হয়েছে এবং আরও কয়েকটি জাহাজে কয়লা বোঝাইয়ের কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ২৫ জুন কয়লাবাহী জাহাজগুলো পর্যায়ক্রমে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জেটিতে নোঙর করা শুরু করবে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছাবে।

আজ শনিবার দুপুরে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহ আব্দুল মাওলা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

শাহ আব্দুল মাওলা বলেন, 'ইন্দোনেশিয়া থেকে ইতোমধ্যে রওনা হওয়া জাহাজগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে থাকা জাহাজ ২৫ জুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়বে বলে আশা করছি। ওই জাহাজটিতে ৩৭ হাজার টন কয়লা রয়েছে।'

পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি জাহাজ পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আকারভেদে ৩৭ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজগুলো এখন নিয়মিত কয়লা নিয়ে আসবে। এই কেন্দ্রটির জন্য মাসে অন্তত ৩ লাখ টন কয়লা প্রয়োজন এবং কয়লার মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে এখন থেকে কয়লা সরবরাহ নির্বিঘ্ন থাকবে বলে আশা করছি।'

'সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাসহ একটি জাহাজ পায়রা বন্দরে আসতে অন্তত ১১ দিন সময় লাগে। ২৫ জুন কয়লাবাহী জাহাজটি নোঙর করলে ওই কয়লা দিয়ে উৎপাদন শুরু প্রক্রিয়া শুরু করতে কমপক্ষে একদিন প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ২৬ জন থেকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোদমে শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।'

পায়রা বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবোঝাই ৬টি জাহাজ ইতোমধ্যে পায়রা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। এসব জাহাজ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে সরাসরি ভিড়বে এবং বন্দরের আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অবিলম্বে পুনরায় উৎপাদনে যেতে পারে।

পায়রা বন্দরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কয়লা পরিবহনে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৮-১০ টি কয়লাবোঝাই জাহাজ পায়রা বন্দরের মাধ্যমে কয়লা সরবরাহ করত। কয়লা সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় পায়রা বন্দরের রাজস্ব আয়ও কিছুটা কমেছে।

ডলার সংকটের কারণে কয়লার দাম পরিশোধ করতে না পারায় গত ২৫ মে থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ২টি ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে ৫ জুন দুপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অপর ইউনিটটিও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটি উৎপাদনে শুরু করে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ইউনিট শুরু করে একই বছরের ২৬ আগস্ট। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মাধ্যমে এ কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ বরিশাল, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের একাংশে সরবরাহ করা হতো। কেন্দ্রটি সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়ায় দেশব্যাপী লোডশেডিং বেড়ে যায়।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চীনা অংশীদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। চীনের এই সংস্থা আর বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালের মে মাসে।

সূত্র আরও জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লার দরকার হয়, যার পুরোটাই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে সিএমসি। ডলার সংকট দেখা দেয়ায় গত ৬ মাস ধরে কোনো বিল পরিশোধ করতে না পারায় মে মাস পর্যন্ত তাদের বকেয়া দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারে। সম্প্রতি ওই বকেয়ার ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের ব্যবস্থা করা হলে সিএমসি কয়লা পাঠাতে রাজি হয়। আর তারই অংশ হিসেবে কেন্দ্রটির জন্য কয়লাবোঝাই জাহাজ এখন বাংলাদেশের পথে।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

16h ago