ভোলায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে বাপেক্স

ভোলায় ইলশা-১ গ্যাসক্ষেত্র থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উত্তোলন হচ্ছে গ্যাস। ছবি: মনির উদ্দিন অনিক

ভোলার ইলিশা ইউনিয়নে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। জ্বালানি অনুসন্ধানকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সবকিছু আশানুরূপভাবে চললে এই মাসের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা প্রথম স্তরে গ্যাস পেয়েছি, যার গভীরতা ৩ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার। এখন আমরা ওপরের দুটি স্তরে গ্যাস আছে কি না তা পরীক্ষা করছি।'

তিনি বলেন, কূপে কতটা উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ আছে সেজন্য প্রথম ড্রিলিং স্টেম পরীক্ষায় দেখা গেছে গভীর স্তরে এর চাপ প্রায় ৩৫০০ পিএসআই এবং গ্যাস প্রবাহ দৈনিক ১৪ মিলিয়ন ঘনফুট।

কূপ থেকে গ্যাস উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক হবে বলে জানান তিনি।

বাপেক্সের ধারণা, নতুন এই ক্ষেত্রটিতে ১৮০-২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৮ এপ্রিল থেকে অনুসন্ধানমূলক কূপ ইলিশা-১ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে এবং ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার গভীরে দ্বিতীয় ড্রিল স্টেম টেস্ট চলতি সপ্তাহে শুরু হবে।

বাংলাদেশে সর্বশেষ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ২০২১ সালের জুনে সিলেটের জকিগঞ্জে। দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আছে এবং বছরে প্রায় ১ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহৃত হয়।

বাপেক্স প্রধান বলেন, ইলিশায় তারা যে মজুদ খুঁজে পেয়েছেন তা এর আগে ভোলা জেলায় আবিষ্কৃত দুটি গ্যাসক্ষেত্র -- শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থের থেকে আলাদা ভূ কাঠামোতে অবস্থিত। 

যদিও ভোলা নর্থ একটি পৃথক গ্যাসক্ষেত্র কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে কারণ অনেক ভূতাত্ত্বিক মনে করেন এটি শাহবাজপুর ফিল্ডেরই একটি বর্ধিতাংশ, যা মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

বাপেক্সের প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেছেন, শাহবাজপুর থেকে ইলিশা কমপক্ষে ৩৫ কিলোমিটার দূরে এবং এর রিজার্ভটি সিসমোজেনিক চুত্যির দ্বারা অন্য দুটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে আলাদা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশ একটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে। 

নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান এমন এক সময়ে ঘটল যখন সরকার ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করছে।

প্রখ্যাত জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, 'অনুসন্ধানটি তাৎপর্যপূর্ণ। বেশ কয়েক বছর আগে সরকারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বলতে শুরু করেছিলেন আমাদের দেশে গ্যাস নেই এবং আমাদের মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে।' 

'তারা অনুসন্ধান বন্ধ করে দেয় এবং আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। আমার মতো ভূতাত্ত্বিকরা সবসময় বলেছেন, ওই দাবি ঠিক ছিল না। আমাদের দেশ বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ হওয়ায় সমুদ্র উপকূল এবং সাগরে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস রয়েছে।

'আমাদের আরও বেশি করে গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করা প্রয়োজন যাতে আমরা এলএনজি কেনা কমিয়ে ডলার বাঁচাতে পারি,' বলেন তিনি। 

২০২২ সালে, বাপেক্স দুই বছরে কমপক্ষে ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। যার অংশ হিসেবে ভোলায় তিনটি কূপ খনন করা হয় এবং সবগুলোতেই গ্যাস পাওয়া যায়।

পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, 'এটি অবশ্যই একটি খুশির সংবাদ, তবে গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে (ইলিশা) দিনে সর্বোচ্চ ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করতে পারে। দেশে দৈনিক ৩০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন।'

তিনি বলেন, যেহেতু ভোলা একটি দ্বীপ, তাই সেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

'ভোলা থেকে পাইপলাইনে বিনিয়োগ কতটা লাভজনক হবে তা দেখার জন্য আমাদের তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্র এবং ইলিশা-১ কূপের যে গ্যাস পাওয়া গেছে, তা একই মজুদ শ্রেণির (রিজার্ভার প্যাকেজ) অন্তর্ভুক্ত, তবে শেষেরটি একটি বিচ্ছিন্ন গ্যাসক্ষেত্র। 

আড়াই থেকে ৫ মিলিয়ন বছর আগে, নদীর পলিমাটি ও অন্যান্য উপাদান মাটির নিচে ইলিশাকে ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্র থেকে আলাদা করেছে। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ ফিল্ডের চেয়েও গভীর স্তরে ইলিশা কূপে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। 

এর আগে টগবি-১ নামে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রেরই অংশ বলে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বলেন। 

'তবে এবার চিত্র ভিন্ন!' এটি থ্রিডি সিসমিক ডেটার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে প্রধানত পলি এবং কাদামাটি দ্বারা গঠিত শিলা দ্বারা ভরাট একটি চ্যানেল ভোলার উত্তর থেকে ইলিশা ক্ষেত্রকে পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছে, তিনি যোগ করেন। 

'বিদেশ থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে আমাদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। আপনি যদি বর্তমান এই পরিস্থিতি বিবেচনা করেন, তবে এই আবিষ্কারটি নিঃসন্দেহে একটি বড় খবর', বলেন আনোয়ার হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

2h ago