চিলমারীর ভাসমান ডিপোতে সরবরাহ বন্ধ, দাম বেড়েছে ডিজেলের

ভাসমান ডিপো
চিলমারী বন্দরে ব্রহ্মপুত্রে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ভাসমান ডিপো। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসমান ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তালিকাভুক্ত ২২ ডিলার, সেখানকার লক্ষাধিক কৃষক ও অন্যান্য ভোক্তারা।

নদের তীরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ৪ লাখ ৪৫ হাজার লিটার তেল ধারণ ক্ষমতার ও যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ৫ লাখ ১২ হাজার লিটার তেল ধারণ ক্ষমতার ভাসমান বার্জ পড়ে আছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ৫ শতাধিক শ্রমিক।

২০২০ সাল থেকে যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ভাসমান ডিপোতে এবং ২০২১ সাল থেকে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ভাসমান ডিপোতে তেল সরবরাহ বন্ধ আছে।

তবে এসব ডিপোয় ১২ জন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।

ডিলাররা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ১৯৮৯ সালে চিলমারী বন্দরের ব্রহ্মপুত্রে তেলের ভাসমান ডিপো স্থাপন করা হয়। প্রথম দিকে মেঘনা ও যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রত্যেকের ২টি করে বার্জ ছিল। তেলের সরবরাহও ছিল পর্যাপ্ত।

১৯৯৭ সাল পর্যন্ত চিলমারী বন্দরের ভাসমান ডিপো থেকে ডিলারদের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হয়েছিল।

১৯৯৮ সালে মেরামতের কথা বলে বার্জ ২টি চিলমারী থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

বাকি ২টি বার্জ থেকে তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখা হলেও তা ২০১২ সাল থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

২০২০ সাল থেকে যমুনা ও ২০২১ সাল থেকে মেঘনার ডিপো থেকে তেল সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে।

তেলের ডিলার জয়নাল মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্রে ভাসমান ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায় বাঘাবাড়িঘাট ও পার্বতীপুর থেকে ট্যাংক-লরিতে ডিজেল নিতে হচ্ছে। এতে প্রতি এক হাজার লিটার তেল পরিবহনে ২ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।'

'চিলমারী বন্দরে ভাসমান ডিপো থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল সরবরাহ করা হলে কৃষকদের কাছে ন্যায্য মূল্যে তা বিক্রি করতে পারবো,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। শুনেছি, এখান থেকে ডিপো সরিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।'

ডিলার হযরত আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্রে তেলের ভাসমান ডিপো চিলমারী বন্দরের ঐতিহ্য। শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভাসমান ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।'

'আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু সদুত্তর মিলছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'সংশ্লিষ্টরা শুধু ব্রহ্মপুত্রে নাব্যতা সংকটের কথা বলছেন। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্রের মূল চ্যানেল দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত রুটে মালবাহী জাহাজ চলাচল করছে। নদের যে অংশে নাব্যতা আছে সেখানে ডিপো সরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। চিলমারী বন্দরে ভাসমান ডিপোর সঙ্গে অনেকের জীবিকা জড়িত।'

ব্রহ্মপুত্রের চর মনতোলার কৃষক নাদের আলী মন্ডল (৬৭) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাসমান ডিপো থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেশি দামে ডিজেল কিনছি। ভাসমান ডিপো থেকে তেল সরবরাহের দাবি জানাই।'

চর শাখাহাতি এলাকার কৃষক আজগর আলী (৬৭) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে আগের তুলনায় বোরো চাষ কয়েক গুণ বেড়েছে। গত ৩ বছর ধরে ব্যাপকহারে ভুট্টা চাষও হচ্ছে। বোরো ও ভুট্টাচাষে প্রচুর পানি লাগে। পর্যাপ্ত তেল প্রয়োজন। ডিপো চালু থাকলে কম দামে তেল কেনা যেত। এখন প্রতি লিটারে ১/২ টাকা বেশি দিয়ে তেল কিনতে হচ্ছে।'

রমনাঘাটে নৌকার মাঝি সাইফুল ইসলাম (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে যাত্রী, পণ্য পরিবহন ও মাছ ধরতে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি ডিজেলচালিত নৌকা চলাচল করে। ভাসমান ডিপোর তেল সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে।'

রমনাঘাটের শ্রমিক মেরাজ হোসেন (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখন তেল সরবরাহ ছিল তখন কয়েক শ মানুষের কাজের সুযোগ হয়েছিল। এখন ঘাটে দিনমজুর-কুলির কাজ করতে হচ্ছে। অনেকের কাজ নেই। তেল সরবরাহ চালু হলে কাজের সুযোগ হবে।'

চিলমারী বন্দরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ভাসমান বার্জ ডিপো ইনচার্জ মহসিন হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্রে নাব্যতা সংকটের কারণে তেলবাহী জাহাজ চিলমারী বন্দরে আসতে পারছে না। তাই সেখানে তেল সরবরাহ বন্ধ আছে।'

'চিলমারীতে তেলের চাহিদা অনেক' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সেখানে স্থায়ী তেল ডিপো স্থাপনের সিদ্ধান্ত আছে। তবে তা কবে হবে সে বিষয়ে বলতে পারছি না।'

চিলমারীতে যমুনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ভাসমান ডিপোর ইনচার্জ শাহজালাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্রে ভাসমান বার্জ থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ আছে। নদের নাব্যতা সংকট কেটে গেলে হয়তো তেল সরবরাহ হতে পারে। তবে কবে নাগাদ হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।'

চিলমারীতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএর প্রধান পাইলট মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদে কোথাও কোথাও নাব্যতা সংকট আছে। কিন্তু মূল চ্যানেল দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করছে। বর্তমানে অর্ধেক তেল নিয়ে জাহাজ চিলমারী বন্দরে আসতে পারবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে চিলমারী বন্দরের ভাসমান ডিপোতে তেল সরবরাহ শুরু করতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Fund crunch hits Rohingyas hard

A humanitarian crisis in Cox’s Bazar Rohingya camps is brewing in the face of funding shortage for the refugees and more arrivals from the conflict-ridden Rakhine state of Myanmar.

10h ago