বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধির অর্থ তার আয় বাড়ছে: নসরুল হামিদ

পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানো হয় গত ২১ নভেম্বর এবং তা কার্যকর হয় ১ ডিসেম্বর থেকে। তখন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, 'গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না। জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।'

এরপর গত ১২ জানুয়ারি ঘোষণা আসে বিদ্যুতের খুচরা দাম ৫ শতাংশ বাড়ছে এবং সেটা কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি থেকেই।  এই ঘোষণার মাত্র ১৯ দিন পর বিদ্যুতের খুচরা দাম আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হলো আজ, যা কার্যকর হবে আগামীকাল থেকে। সেইসঙ্গে পাইকারি বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়েছে ৮ শতাংশ।

এত অল্প সময়ের মধ্যে একাধিকবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, এটি জনগণের 'উদ্বিগ্ন হওয়ার' কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের পরিকল্পনাসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: ১৯ দিনের ব্যবধানে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ালেন।

নসরুল হামিদ: প্রতি মাসেই আমরা বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করব। এবার ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য পাইকারি পর্যায়ে ৮ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে।

ডেইলি স্টার: তার অর্থ কি প্রতি মাসেই দাম বাড়বে?

নসরুল হামিদ: দাম সমন্বয় করব, বাড়ানো হবে তা তো বলিনি। সেক্ষেত্রে দাম কমতেও পারে, বাড়তেও পারে। মূলত, ফুয়েলের দামের ওপর ভিত্তি করে দাম সমন্বয় করা হবে। আমরা ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসব, এটাই মূল লক্ষ্য।

আমরা যদি দেখি যে ফুয়েলের দাম স্থিতাবস্থায় এসেছে, তখন হয়তো আর সমন্বয় করতে হবে না।

ডেইলি স্টার: সমন্বয় বলতে তো আমরা সাধারণত দাম বাড়ানোই বুঝি, কমাতে তো দেখি না।

নসরুল হামিদ: ফুয়েলের দাম যেভাবে বাড়ছে, দাম সমন্বয় আমাদের করতেই হবে। অন্য কোনো বিকল্প নেই।

ডেইলি স্টার: আদানির বিদ্যুৎ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে কি সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুখবর থাকবে? নসরুল হামিদ: অবশ্যই থাকবে। সবাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে। ডেইলি স্টার: দামের ক্ষেত্রে? নসরুল হামিদ: দাম তো নির্ধারণ হয় ফুয়েলের উপর। এর ওপর নির্ভর করবে দাম কমবে, নাকি বাড়বে।

ডেইলি স্টার: ভর্তুকি থেকে কি পুরোপুরি বের হয়ে আসবেন?

নসরুল হামিদ: ধীরে ধীরে সেদিকেই যাব। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে পুরোপুরি বের হয়ে আসব।

ডেইলি স্টার: আদানির বিদ্যুৎ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলে কি সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুখবর থাকবে?

নসরুল হামিদ: অবশ্যই থাকবে। সবাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে।

ডেইলি স্টার: দামের ক্ষেত্রে?

নসরুল হামিদ: দাম তো নির্ধারণ হয় ফুয়েলের উপর। এর ওপর নির্ভর করবে দাম কমবে, নাকি বাড়বে।

ডেইলি স্টার: বিদ্যুতের দাম যখন বাড়ে, তখন বলা হয় জনগণের ওপর এর প্রভাব পড়বে না। মানুষের আয় কি বাড়ছে?

নসরুল হামিদ: আমরা ভর্তুকি থেকে বের হতে চাই। এখন সরকার মনে করছে যে সময় এসেছে, আর ভর্তুকি আমরা দিতে পারব না। কারণ ফুয়েলের দাম যে পরিমাণ বেড়ে গেছে, ভর্তুকির আকারটাও অনেক বড় হয়ে যাবে। বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে সেটা তো সরকার ট্যাক্সের মাধ্যমে আদায় করবে। দিন শেষে কী হবে? সবার ওপরে চাপ পড়বে। এ জন্যই আমরা বলছি, আপনারা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করুন, কম ব্যবহার করে।

বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধির অর্থ তার আয় বাড়ছে। আয় বৃদ্ধির কারণে বাড়তি বিল তিনি দিতে পারছেন। আমি ডেটা নেই এভাবে। আয় না বাড়লে তিনি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বিল দিচ্ছেন কীভাবে?

ডেইলি স্টার: মানুষের আয় বাড়ছে না। এখন তো মানুষের ওপর চাপ পড়বে।

নসরুল হামিদ: আমরা যেভাবে সমন্বয় করছি— ১০ পয়সা, ১৫ পয়সা— সারা বছরে নিম্ন আয়ের মানুষের খরচ ৩৮০ টাকার মতো বাড়বে। তাদের অবস্থা খারাপ হবে এটা যৌক্তিক কথা না। তাদের আয় বাড়ছে কি না, সেটা তো বিষয় না। বিষয় হচ্ছে, বছরে যদি কারো খরচ ৩৮০ টাকা বাড়ে, স্বাভাবিকভাবেই তার কোনো সমস্যা হবে না। তারা তো দারিদ্রসীমা থেকে বের হয়ে আসছেন।

ডেইলি স্টার: পরিসংখ্যান কি এটাই বলে যে দেশের মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বের হয়ে আসছে?

নসরুল হামিদ: হ্যাঁ, পরিসংখ্যান তাই বলে। আমার কাছে পরিসংখ্যান আছে। ১ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহক আছেন, যারা লাইফলাইনে আছেন। প্রতি বছর কত মানুষ এই সীমা থেকে বের হচ্ছে, তা নির্ভর করে বিদ্যুতের ব্যবহারের উপর। বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধির অর্থ তার আয় বাড়ছে। আয় বৃদ্ধির কারণে বাড়তি বিল তিনি দিতে পারছেন। আমি ডেটা নেই এভাবে। আয় না বাড়লে তিনি ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বিল দিচ্ছেন কীভাবে?

আপনারা চাইলে বিকাশের কাছ থেকে ডেটা নিতে পারেন। সেখানে আপনারা দেখতে পাবেন, কোন এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা পাঠানো হয়। তাহলেই বুঝতে পারবেন ওই এলাকার দারিদ্রসীমা কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। আমি তাদের ডেটাও দেখেছি। আমি দেখেছি বরিশালের পটুয়াখালীর মানুষ সবচেয়ে কম বিকাশ করে। তার মানে পটুয়াখালীর মানুষের আয় কম। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার মানুষ বেশি বিকাশ ব্যবহার করছে, টাকা পাঠাচ্ছে। তার মানে তাদের আয় বাড়ছে।

বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়াটা বড় জিনিস না। দিল্লি সিটিতে চমকপ্রদ ধারণা তৈরির জন্য পলিটিক্যাল স্টান্ট করা একটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু, ১৬ কোটি মানুষকে ভর্তুকি দিয়ে তাদেরকে ধীরে ধীরে দারিদ্রসীমা থেকে কীভাবে বের করা যায়, আমাদের সরকার সেই ব্যবস্থা করেছে। তাহলে কোনটা বড় হলো।

ডেইলি স্টার: বিদ্যুৎখাতে যে ক্যাপাসিটি চার্জ, দুর্নীতি বিষয়ক আলোচনা আছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে দাম না বাড়ালেও চলতো…

নসরুল হামিদ: এটা একটা বড় বিষয়। বিএনপির সময় সিস্টেম লস ছিল ২২ শতাংশ। সিস্টেম লসের মধ্যে কী কী থাকে? এর মধ্যে আছে ট্রান্সমিশন লস, কারচুপি বা চুরি। এই সিস্টেম লস এখন নেমে ৬-৭ শতাংশে চলে এসেছে।

আর ক্যাপাসিটি চার্জ তো সবাই দেয়। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রেও তো ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছি। আমি নিজে যখন উৎপাদন করছি তখন এই খরচটা যাচ্ছে, আরেকজনের কাছ থেকে যখন নিচ্ছি, তখনও এটা দিতে হচ্ছে। দেখার বিষয় হচ্ছে, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে এই চার্জের ভারসাম্য আছে কিনা। এটা নিশ্চিত করতে পারি যে এখানে ভারসাম্য আছে, অনেক বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছি না।

ডেইলি স্টার: দিল্লিতে কেজরিওয়াল সরকার একটি নির্দিষ্টসীমা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দিচ্ছে। গরীব মানুষের জন্য এমন কোনো মডেলে যাওয়ার পরিকল্পনা কি আছে আপনাদের?

নসরুল হামিদ: আমরা তো এগুলো অনেক আগেই করেছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর একটা বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আমরা সারা পৃথিবীর সব ডেটাই ফলো করি। কোন দেশে কোন নেতা কি ধরনের পলিসি নিচ্ছে সেগুলো আমরা ফলো করি। শেখ হাসিনা বহু আগেই দেশের মানুষের জন্য লাইফলাইন করেছেন।

আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গরীব মানুষকে বিদ্যুতের সুযোগ-সুবিধার মধ্যে নিয়ে আসা এবং তাদেরকে দারিদ্রসীমা থেকে বের করে আনা।

ডেইলি স্টার: বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার আম আদমির কেজরিয়াল মডেলের কথা বলছিলাম।

নসরুল হামিদ: বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়াটা বড় জিনিস না। দিল্লি সিটিতে চমকপ্রদ ধারণা তৈরির জন্য পলিটিক্যাল স্টান্ট করা একটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু, ১৬ কোটি মানুষকে ভর্তুকি দিয়ে তাদেরকে ধীরে ধীরে দারিদ্রসীমা থেকে কীভাবে বের করা যায়, আমাদের সরকার সেই ব্যবস্থা করেছে। তাহলে কোনটা বড় হলো। আমরা তো দেশের মানুষের কথা ভাবছি।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago