ঘূর্ণিঝড় মোখা

রোববার বিকেল ৪টার মধ্যে আঘাত হানার আশঙ্কা, ঝুঁকিতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন

আগামীকাল দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে বড় অংশ আঘাত হানার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ
স্যাটেলাইট ইমেজ

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোখা আগামীকাল দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এটি বর্তমানে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে।

আজ শনিবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরে পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের এই কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে অর্থাৎ আমাদের টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ঝড়ের কেন্দ্রের পরিধি ৭৪ কিলোমিটার। এটি যদি সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ দিয়ে অতিক্রম করে তারপরও টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে কেন্দ্রের প্রভাব পড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগামীকাল দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে বড় অংশ আঘাত হানার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। স্থলভাগে আঘাত করার পরে এটি যখন উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে শুরু করবে, সেই সময় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা এর প্রভাব থাকবে। এর পরে ঝড়টি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাবে।'

বাতাসের গতি বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'যখন এস্টিমেটেড সেন্টার প্রেসার কমে যায় তখন বাতাসের গতি বেড়ে যায়। কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা আগে মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার নিয়ম, আমরা গতকাল দিয়েছি মহাবিপদ সংকেত। এখন যেহেতু ঝড়টি আরও এগিয়ে আসছে, কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের পাশ দিয়ে এর কেন্দ্র অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে কক্সবাজারকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় নিয়ে এসেছি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর ১৫) জানানো হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

এতে আরও জানানো হয়, আজ রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।

ঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। যে কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এছাড়া, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজারের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো থাকবে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায়।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

Comments