বান্দরবানে বন্যা: ২ দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/08/07/bandarban-2.jpg)
টানা ৭ দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানিতে টইটম্বুর বান্দরবান জেলার প্রধান ২ নদী সাঙ্গু ও মাতামুহুরী। এতে জেলা শহরসহ রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সোমবার পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা শহরে ফায়ার সার্ভিস, টাউন হল, রাজগুরু বৌদ্ধবিহারসহ প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে আছে। এই পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরের পর থেকেই সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
চলমান পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/08/07/bandarban-3.jpg)
জানা গেছে, নদীতে অস্বাভাবিক পানি প্রবাহের কারণে অনেক জেলা সদরসহ অন্য উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। এতে অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলা শহরে প্রায় ২ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলীকদমে উপজেলার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাজার ও আশপাশের এলাকায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। রাস্তাঘাটে পানি থাকায় এসব উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, টানা ৭টিন প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি অনেক বেড়েছে। গতকাল বিকেল থেকে উপজেলা শহরের একের পর এক এলাকা পানিবন্দি হতে শুরু করে। এই অবস্থায় বিদ্যুৎও নেই। ফলে মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগও করতে পারছেন না তারা।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/08/07/bandarban-1.jpg)
বান্দরবান জেলা আবহাওয়া অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক আজ সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৭দিনে বান্দরবানে ৬৬৮ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ২৯৫ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত।
এ বৃষ্টিপাত আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন জেলা আবহাওয়া অফিসের এই কর্মকর্তা।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/08/07/bandarban-4_0.jpg)
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল মনসুর ডেইলি স্টারকে জানান, উপজেলার থানচি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৭০টি পরিবার ও বলিপাড়া ইউনিয়নে বলিপাড়া মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ে ৩০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'উপজেলা সদর ও বলিপাড়া ২ ইউনিয়নের ২টি কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলার সঙ্গে থানচি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে উপজেলার জনসাধারণের সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও থানা পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের পাদদেশের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের মোট ৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে মাইকিং করা হয়েছে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নের ৪টি প্রাথমিক স্কুল, ২টি উচ্চ মাধ্যমিককে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। ছোটখাট দুয়েকটি পাহাড়ধসের ঘটনার খবর পাওয়া গেলেও ক্ষয়ক্ষতি খবর পাওয়া যায়নি।'
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/08/07/bandarban-5.jpg)
নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা ডেইলি স্টারকে জানান, বান্দরবান জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলার মতো নাইক্ষ্যংছড়িতে সপ্তাহব্যাপী ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে গত ২ দিন ধরে কিছুটা ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। এখনো জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে পাহাড়ি ঝিড়ি-ঝর্ণা থেকে ঢলে আসা পানির কারণে কিছুটা সময় জলাবদ্ধতা থাকলেও বৃষ্টি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিও কমে যায়।
বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বান্দরবান শহর অর্ধেক অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। বান্দরবানের আশপাশের এলাকা যেমন: ক্যামলং, মাঘমারা, বালাঘাটা, ক্যচিংঘাটা, তংপ্রু পাড়া, ধোপাছড়াসহ অনেক এলাকার জনসাধারণ এখন পানির দুর্ভোগের মধ্যে আছে।'
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/08/07/bandarban-6.jpg)
বান্দরবানে আগে পরিস্থিতি এরকম হতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বান্দরবানে আগে এরকম ছিল না। এখন অল্প বৃষ্টি হলেই নদীতে পানি বেড়ে বন্যা হয়ে যায়। কারণ পাহাড়ে ঝিড়ি-ঝরনা ও শহর এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে পাহাড়ে গাছ-পালা আগের মতো নেই। যে যেভাবে পেরেছে, সব কেটে ফেলেছে। ফলে অল্প বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের পানির ঢলের সঙ্গে মাটি-বালি চলে এসে নদীতে জমে নদীর নাব্যতা কমে যায়। সেই কারণে বৃষ্টি হলে সে পানি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই বন্যার সৃষ্টি হয়।'
'তা ছাড়া শহরের কথা যদি বলি, শহরে যে মেইন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল, সেটা নানাভাবে দখল করে অপরিকল্পিতভাবে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে, ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে। ফলে একদিকে নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে পানি উপচিয়ে পড়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, অন্যদিকে শহরে মেইন ড্রেনেজ ব্যবস্থা দখল করে ড্রেন সংকোচিত করে ফেলছে। সব মিলিয়ে এ ২টাই বান্দরবান শহরে জলাবদ্ধতার পেছনের প্রধান কারণ', বলেন তিনি।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2023/08/07/bandarban-7.jpg)
এ জলাবদ্ধতা সহজে যাবে না উল্লেখ করে একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, 'শহর এলাকায় অনেক ধান ও ফসলের জমি পানির তলে তলিয়ে গেছে। সামনে কৃষক, খামারি, জুম চাষি ও সাধারণ খেটে-খাওয়া জনসাধারণের ওপর একটা কঠিন প্রভাব পড়তে পারে।'
Comments