পদ্মার ভাঙনে গৃহহীন শতাধিক পরিবার, ঝুঁকিতে বিদ্যালয়-মসজিদ-কমিউনিটি ক্লিনিক
পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী গ্রামে। ভাঙনে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছেন। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ১০ একর ফসলি জমি।
গত ২৬ জুন থেকে ওই গ্রামে এ ভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে আরও দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি পাকা মসজিদ।
ভাঙনরোধে গত বুধবার থেকে নদী তীরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শনিবার সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে অন্তত ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা গেছে। ইউসুফ মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের উত্তরে কালাম শেখের বাড়ি থেকে শুরু করে দক্ষিণে কাইমুদ্দিন মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত নদীর পাড়ে ভাঙনের চিহ্ন দেখা গেছে।
ইতোমধ্যে নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে গ্রামের ভেতরে ৩০০-৪০০ মিটার ঢুকে গেছে। এতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। এসব জমিতে আউশ ধান, তিল, ইরি ধান ও ভুট্টার চাষ হয়েছিল। তড়িঘড়ি করে কৃষকদের শস্য কেটে নিতে দেখা যায়।
এলাকাবাসীরা জানায়, গত ২৬ জুন থেকে নদী পাড় ধরে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রথম ৩-৪ দিন ভাঙনের তীব্রতা ছিল বেশি। বর্তমানে ভাঙনের গতি কমে এলেও অব্যাহত আছে।
গত মাসের শেষে ঈদের দিনগুলোতে ঘরবাড়ি সুবিধাজনক স্থানে সরাতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে তাদের।
ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষক মাইমুদ্দিন মোল্লা (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বসত-ভিটাসহ ২ একর ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।'
একই এলাকার বাসিন্দা আলতাফ মিয়া (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ১ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। এবার আমাদের ঈদ ছিল না। ছেলেমেয়ের মুখে একটু সেমাই তুলে দিতে পারিনি।'
অথচ এর মধ্যে কোনো ধরনের সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা তারা পাননি। এমনকি তাদের এ দুরবস্থা দেখতে কোনো কর্মকর্তাও যাননি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
এদিকে, ভাঙন কবলিত স্থান থেকে থেকে ১২০ মিটার দূরে চর টেপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী জামে মসজিদ। এ প্রতিষ্ঠানগুলোও ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।
চর টেপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকান্ত ঘোষ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের আগে ভাঙ্গনের পরিস্থিতি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি তোলা হবে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে।'
জানতে চাইলে নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙনকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কাউকে এখনো কোনো সাহায্য দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। ভাঙনরোধে কিছু জায়গায় কাজ চলছে।'
'ভাঙনের ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি অনেক বেশি' উল্লেখ করে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, 'একদিকে কাজ করা হলে অন্যদিক ভেঙে যাচ্ছে।'
জানতে চাইলে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে। দুটি প্যাকেজে ভাঙনকবলিত এলাকার ১৫৩ মিটার অংশে এ কাজ চলছে।'
তিনি বলেন, 'দুটি প্যাকেজে ২৫০ কেজি বালুসহ ১১ হাজার ৩৪টি জিও ব্যাগ এবং ১৭৫ কেজি বালুসহ ২ হাজার ৩৭৭টি জিওব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ২৫০ কেজি বালুভর্তি ৬ হাজার ২০৯ এবং ১৭৫ কেজি বালুভর্তি ১ হাজার ৩৪৩টি জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে।'
Comments