ফাঁসির দৃশ্য করতে গিয়ে প্রায়ই মারা যাচ্ছিলাম: মিশা সওদাগর
ঢাকাই সিনেমার পরিচিত মুখ মিশা সওদাগর। এ পর্যন্ত ৮ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
আসছে ঈদে তার অভিনীত তিনটি সিনেমা এখন পর্যন্ত মুক্তির জন্য চূড়ান্ত হয়েছে। এগুলো হলো- কিল হিম, লিডার আমিই বাংলাদেশ, প্রেম প্রীতি বন্ধন। এছাড়া শত্রু নামের আরেকটি সিনেমা মুক্তির সম্ভাবনা আছেন। নতুন সিনেমা ও দীর্ঘ ক্যারিয়ার নিয়ে রোববার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেন মিশা সওদাগর।
ঢাকাই চলচ্চিত্রে ভিলেন হিসেবে বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তিন দশকেরও বেশি সময়ের জার্নিতে আপনি কার কাছে কৃতজ্ঞ?
টোটাল চলচ্চিত্র শিল্পের কাছে কৃতজ্ঞ। ঢাকাই সিনেমা শিল্পের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। অনেক পরিচালক ও প্রযোজকের কাছে কৃতজ্ঞ। সহশিল্পীদের কাছেও কৃতজ্ঞ। ইউনিটের যারাই শুটিংয়ের সময় থেকেছেন, তাদের সবার প্রতি আমার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। নাম বলে শেষ করা যাবে না, সেজন্য বলছি অনেক গুণী পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী, সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। একইসঙ্গে আমার দর্শকদের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দর্শক আমাকে ভালোবাসেন। তাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে শেষ করা যাবে না। সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ মহান আল্লাহর প্রতি।
এতদিনের জার্নি কতটা সহজ বা কঠিন ছিল?
শিল্পের পথ কখনোই সহজ নয়, এটা আমার অভিমত। আমার এত বছরের অভিনয় জীবনে প্রচুর সিনেমা করেছি। একসময় ভিলেন চরিত্রে আমাকে দিনরাত শুটিং করতে হয়েছে। এতটাই ব্যস্ত ছিলাম সংসারেও সময় কম দিয়েছি। চাইলেও সময় দিতে পারিনি। কখনো দেশে শুটিং, কখনো বিদেশে শুটিং। সিনিয়র শিল্পীদের সঙ্গে যেমন সিনেমা করেছি, সমসাময়িকদের সঙ্গেও করেছি। আবার এখনকার জেনারেশনের শিল্পীদের সঙ্গেও অভিনয় করছি। এতে আমার জন্য অনেক লোড হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তারপরও অভিনয় ছাড়িনি বা কোনো সিনেমা ছেড়ে দিইনি। আমি ঢাকাই সিনেমার একজন শিল্পী। সেজন্য সব শিল্পী, পরিচালক থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে অমার ভালো সম্পর্ক। সম্পর্কের জন্য এবং সিনেমাকে ভালোবাসি বলে কাউকে না করতে পারিনি। একটার পর একটা সিনেমা করেছি। এখনো করছি।
অভিনয় জীবনের সুখের স্মৃতি অনেক আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু কোনো কষ্টের স্মৃতি কি আছে?
অনেক কষ্টের স্মৃতি আছে। অভিনয় করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে অ্যাকসিডেন্ট করেছিলাম। মিশা ভাই মারা গেছে- এমনও বলা হয়েছিল। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। পায়ের রগ ছিঁড়ে গেছে, ডাক্তার আমাকে শুটিং করতে না করেছেন, তারপরও সিনেমার ক্ষতি যেন না হয় সেজন্য আমি শুটিং করেছি। একবার হাতে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি; কিন্তু আমার শিডিউল দেওয়া; আমি যদি না করে দিই সিনেমার ক্ষতি হবে- সব ভেবে আমি কষ্ট করে হলেও শুটিং করেছি। আমার মেরুদণ্ডে সমস্যা আছে। অ্যাকশন সিনেমা করতে গেলে সমস্যা হয়। তারপরও আমি অ্যাকশন সিনেমা খুব ভালোবাসি। সেজন্য না করি না। অ্যাকশন একটি সিনেমার অলঙ্কার।
আমার প্রতিজ্ঞা সিনেমায় ফাঁসির দৃশ্য ছিল। তার আগে ওই ধরনের কোনো চরিত্র করিনি। ফাঁসির দৃশ্য করতে গিয়ে প্রায়ই মারা যাচ্ছিলাম। ইউনিটের কেউ কেউ ভেবেছিল আমি মারা গেছি। তাপরও আমি অভিনয় করেছি, অভিনয় ছাড়িনি। কারণ অভিনয় ভালোবাসি। ঢাকাই সিনেমাকে ফাঁসির দৃশ্য করতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে যায়। সেদিন আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন।
হাত-পা কাটা, পা ভাঙা, তারপরও আমি সিনেমার শুটিং শেষ করেছি। মমতাজুর রহমান আকবরের সিনেমা আমার প্রাণের স্বামী। সেদিন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বউ বলল- বাড়িতে চলো, কিন্তু আমি শুটিং শেষ না করে যাইনি। এভাবেই কষ্ট করে, পরিশ্রম করে, সততা নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে অভিনয় করছি বছরের পর বছর ধরে।
তাহলে পরিবারকে সময় দিয়েছেন কখন?
আমার বড় ছেলে কখন বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি শুটিংয়ে ব্যস্ততার জন্য। বড় ছেলে এখন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। এমনও হয়েছে আমি শুটিং থেকে ফিরেছি মাঝরাতে বা শেষ রাতে, তখন আমার বড় ছেলে ঘুমাচ্ছে। আবার সকালবেলা ছেলে যখন স্কুলে চলে যায়, তখন হয়ত আমি ঘুমাচ্ছি। আবার কখনো ব্যাংকক, কখনো মালয়েশিয়া, কখনো দেশের মধ্যে আউটডোরে শুটিং নিয়ে দিনের পর দিন ব্যস্ত থেকেছি। বিদেশে প্রচুর শুটিং করেছি। বড় ছেলে এমনি করেই বড় হয়ে গেছে।
রেকর্ড সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছেন, 'না' শব্দটি কি আপনার ক্যারিয়ারে নেই?
আমি শুধু অভিনয় করে গেছি, সংখ্যার হিসাব করিনি। ভালোবাসা ও সততা নিয়ে এগিয়েছি। সবার সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এজন্য চাইলেও কখনো না বলতে পারিনি। সম্পর্কের জন্য এবং ঢাকাই চলচ্চিত্রকে ভালোবাসি বলেই কাউকে না করতে পারিনি। এই শিল্প আমাকে মিশা সওদাগর বানিয়েছে। দেখুন আমাদের দেশে নায়ক অনেক, কিন্তু ভিলেন একজনই। তাই আমার ওপর কাজের চাপ বেশি পড়েছে। পরিচালকরা আমাকে বিশ্বাস করতেন, এখনো করেন। আমার তারিখ নিয়ে অন্যদের তারিখ মেলাতেন।
অভিনয় জীবনে স্ত্রীর অবদান কতটুকু?
আমার অভিনয় ক্যারিয়ারে স্ত্রীর অবদান অনেক। আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি। এখন আমার দুই সন্তান। বড় চেলে যুক্তরাষ্ট্রে। ওর নাম হাসান মোহাম্মদ ওয়ালিদ। ছোট ছেলে 'ও' লেভেলে পড়ছে। ওর নাম ওয়াইজ করনী। আমার প্রতি আমার স্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস আছে। তাই আমরা সুন্দরভাবে সংসার করছি।
Comments