দুর্দান্ত অভিনয়, ইরফানপুত্র বাবিলে মুগ্ধ দর্শক

babil-khan
‘দ্য রেলওয়ে ম্যান’ সিরিজের দৃশ্যে বাবিল খান। ছবি: সংগৃহীত

নির্মাতা মীরা নায়েরের প্রামাণ্যচিত্র 'সালাম বোম্বেতে' একজন চিঠি লেখকের ভূমিকায় দেখা যায় ইরফান খানকে। ওই সিনেমার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় আসেন তিনি। তার অপলক চাহনি সিনেমায় এমন অনেক কথাই বলে দিয়েছিল, যা শব্দ দিয়ে বলা যায় না।

৩৫ বছর পর সিনেমাটিক জগতে এমনই মায়াবী চাহনি দিয়ে আবির্ভাব ইরফানপুত্র বাবিলের। তার সিরিজ 'দ্য রেলওয়ে ম্যান' ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে সিনেপ্রেমীদের মাঝে। সেইসঙ্গে দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাবিল।

তবে তুলনাটা যেন বাবা ইরফান খানের সঙ্গেই। হবেই না কেন? ইরফানের নামের পাশে আছে 'মকবুল', 'লাইফ অব পাই', 'দ্য নেমসেক', 'পান সিং তোমার', 'দ্য লাঞ্চ বক্স' ও 'পিকু'র মতো অসংখ্য সিনেমা। এদিকে বাবিলের সিনেজগত কেবল শুরু। বাবার ছায়ায় বড় হওয়া বাবিল খানের যাত্রাটা কেমন? কী তার নেপথ্যের গল্প? ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখছেন বাবিল?

babil-khan_2_collected_ds
বাবিল খান। ছবি: সংগৃহীত

অনুপ্রেরণা ইরফান খানই

অভিনয়জীবনে বাবিলের অনুপ্রেরণা বাবা ইরফান খানই। দ্য ডেইলি গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিনয়ের শুরু নিয়ে তিনি বলেন, 'আমি শুধু কাজ করতে চেয়েছি। বাবার সিনেমা দেখেই অভিনয়ের প্রেমে পড়া। একদিন বাবাকে বলি, আমি অভিনয় করব। বাবা বললেন আগে যেন পড়াশোনা শেষ করি, অভিনয় তিনিই শিখিয়ে দেবেন। কিন্তু পড়া শেষ করে ফিরতে দেরি হয়ে যায়।'

মুম্বাইয়ের ত্রিধা স্কুল থেকে মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান বাবিল। সেখানের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট মিনিস্টার থেকে ফিল্মের ওপর ডিগ্রি নেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া 'কারিব কারিব সিঙ্গেল'য়ের মাধ্যমে। সিনেমায় একজন ক্যামেরা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন তিনি।

ইরফানের মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছিলেন বাবিল, প্রথম অডিশন দিয়েছিলেন বন্ধুর সহায়তায়। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাবিল বলেন, 'বাবার হঠাৎ চলে যাওয়ায় আমি একেবারেই ভেঙে পড়ি। তাই স্ক্রিপ্ট (কলা সিনেমা) নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু "কলা" সিনেমার পরিচালক অনবিতা দত্তকে অ্যাসিস্ট করছিল।'

babil-khan-with-irrfan-khan_collected_ds
বাবা ইরফান খানের সঙ্গে বাবিল। ছবি: সংগৃহীত

বাবার হারানোর শোকের মাঝেই প্রোডাকশন হাউসে অডিশন দেন বাবিল, পেয়ে যান তার প্রথম সিনেমা।

একই সাক্ষাৎকারে 'কলা' সিনেমার পরিচালক অনবিতা দত্ত বাবিলকে 'সুন্দর এক দেবপুত্র'র সঙ্গে তুলনা করেন।

তিনি বলেন, 'আমি জানতাম ও (বাবিল) ফিল্ম নিয়ে পড়ছে, সিনেমেটোগ্রাফার হতে চায়। অডিশনে প্রথম দুই লাইন শুনেই আমি নিশ্চিত হই যে জগনের চরিত্রটি সেই করবে।'

ইউটিউবে নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার 'অ্যাক্টর্স রাউন্ড টেবিল উইথ নিতেশ মিশরা' নামের শোতে 'দ্য রেলওয়ে ম্যান' সিরিজের সব অভিনেতাদের ডাকা হয়। সেই আড্ডায় কে কে মেননের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা জানান বাবিল।

তিনি বলেন, 'সেটে অভিনয় করার সময় বাবার কমতি কখনো মনে হয়নি আমার। কেননা, কে কে স্যার ছিলেন। আমার যখনই কোনো কিছু দরকার হতো বা মনে হতো যে জানা প্রয়োজন, আমি সঙ্গে সঙ্গেই কে কে স্যারের কাছে চলে যেতাম। তিনিও আমাকে সবসময় সহায়তা করেছেন।'

babil-khan-in-qala_collected_ds
‘কলা’ সিনেমায় বাবিল খান। ছবি: সংগৃহীত

অভিনয়েই বিচরণ করতে চান বাবিল

২০২২ ও ২০২৩ সাল—এই দুই বছরে বাবিলের ঝুড়িতে রয়েছে 'কলা', 'ফ্রাইডে নাইট প্ল্যান' ও 'দ্য রেলওয়ে ম্যান'। দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য ইতোমধ্যেই তিনি দর্শক আলোচনায় রয়েছেন।

গল্পনির্ভর চরিত্র, কমেডি কিংবা তথাকথিত বলিউডের বাণিজ্যিক সিনেমা—সব ক্ষেত্রেই ইরফান খান তার অভিনয়ের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। বাবিলের পরবর্তী প্রজেক্ট একটি কমেডি ড্রামা। সেখানে তিনি অভিনয় করবেন ওয়েব সিরিজে 'কোটা ফ্যাক্টরি'র অভিনেতা জিতেন্দ্র কুমারের সঙ্গে। সিনেমাটির নাম এখনো জানা যায়নি।

babil-khan_collected_ds
বাবিল খান। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে বাবিল বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—নিজের সম্পর্কে অন্যের ধারণা নিয়ে নিজেকে বিব্রত করা থেকে বিরত থাকি আমি। আমি কোনো পরিকল্পনা করতে চাই না। আমি অভিনয়ে বিচরণ করতে চাই। বিচরণ আর পরিকল্পনা এক সঙ্গে হয় না। আমি সব ধারার সিনেমায় বিচরণ করতে চাই।'

সুযোগ পেলেই শখে গানও করেন বাবিল। এর প্রমাণ মেলে তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে। অবসর পেলেই গান লেখেন আর গিটার নিয়ে সুর করেন। নতুন-পুরোনো দিনের ইংরেজি ও হিন্দি গানের সুরও তার কণ্ঠে দারুণ মানায়।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডেইলি গার্ডিয়ান, লাইফস্টাইল এশিয়া

গ্রন্থনা: মো. ইমরান

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago