যে অভিনয়শিল্পীর সন্তানেরাও অভিনয়ে

ছবি: সংগৃহীত

অভিনয়শিল্পীর সন্তানেরা অভিনয়ে—এই ধারাবাহিকতা এদেশে অনেক দিন ধরে চলে আসছে। অনেক বিখ্যাত অভিনয়শিল্পীর সন্তান অভিনয়ে এসে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কেউ কেউ অল্প কিছু কাজ করে শোবিজ ছেড়েছেন। এই সময়ের কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীর সন্তানরাও অভিনয়ে নাম লিখিয়েছেন।

জানা যাক এদেশে কোন কোন অভিনয়শিল্পীর সন্তানেরাও অভিনয়ে এসেছেন।

গুণী অভিনেতা আবুল হায়াতের দুই কন্যা বিপাশা হায়াত ও নাতাশা হায়াত। দুজনেই অভিনয়শিল্পী। বিপাশা হায়াত অভিনেত্রী ও চিত্রশিল্পী। নব্বই দশকে বিপাশা হায়াত অভিনয়ে নাম লেখান। অল্প দিনে তার তারকা পরিচিতি গড়ে ওঠে। মেধাবী এই অভিনেত্রী দীর্ঘ দিন নাটকে শীর্ষ তারকা ছিলেন। অনেক আলোচিত অনেক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। 'অয়োময়' নাটক তার মধ্যে অন্যতম একটি। সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। 'জয়যাত্রা' ও 'আগুনের পরশমণি' অন্যতম। নাতাশা এখন অভিনয়ে নেই। তবে, বেশ কয়েকবছর টানা অভিনয় করেছেন তিনি।

'হুরমতি' খ্যাত স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের একমাত্র মেয়ে ত্রপা মজুমদার মায়ের মতোই একসময় অভিনয়ে জড়িত হন। অনেক বছর ত্রপা মজুমদার নিয়মিত অভিনয় করেছেন। এখন তিনি মঞ্চে নিয়মিত এবং সেই সঙ্গে মঞ্চ নাটক নির্দেশনাও দিচ্ছেন।

টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ফাল্গুনী হামিদের মেয়ে তনিমা হামিদ অভিনয়ে উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতায় সুনাম ধরে রেখেছেন। তনিমা হামিদ টিভি নাটকে দারুণ একটা অবস্থান গড়ে তুলেন বেশ আগে। অনেক ভালো ভালো নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রচুর নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন পরিচিতি। পাশাপাশি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত আছেন তিনি। মঞ্চ নাটকেও সরব আছেন।

ড. ইনামুল হক ও লাকী ইনামের বড় মেয়ে হৃদি হক অভিনয় শুরু করেন মঞ্চ নাটক দিয়ে। তারপর টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একসময় নাটক পরিচালনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এরপর মঞ্চ নাটকও পরিচালনা করেন। সবশেষ তিনি '১৯৭১ সেইসব দিন' চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন।

'দেবদাস' খ্যাত নায়ক বুলবুল আহমেদের মেয়ে ঐন্দ্রিলা আহমেদও অভিনয়ে এসেছেন। তিনি টিভি নাটকে একসময় নিয়মিত অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে বিটিভির নাটকে তার উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। এখন তিনি উপস্থাপনায় যুক্ত আছেন।

এদেশের অন্যতম একজন গুণী অভিনেতা ছিলেন সৈয়দ আহসান আলী সিডনি। টেলিভিশন নাটকে একসময় জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হতো। সেই পুরস্কার পেয়েছিলেন সিডনি। তার পুত্র জিতু আহসান অভিনয়ে এসেছেন বাবার জীবদ্দশায়। তারপর অভিনেতা হিসেবে বেশ নাম কুড়িয়েছেন। প্রচুর নাটকে কাজ করেছেন তিনি। এখনো অভিনয় করছেন নাটক ও সিনেমায়।

আলী যাকের ও সারা যাকের মঞ্চ-টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের তারকা অভিনয়শিল্পী। মঞ্চে দুজনের অবদান অনেক। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে অনেক আলোচিত নাটকে অভিনয় করেছেন আলী যাকের। হুমায়ূন আহমেদের লেখা অনেক নাটকেও অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা। আলী যাকের ও সারা যাকেরের পুত্র ইরেশ যাকের অভিনয়ে এসেছেন অনেক আগে। অভিনয়ে বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন।

শর্মিলী আহমেদ 'আবির্ভাব' সিনেমার নায়িকা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্র ও নাটক—দুই মাধ্যমেই অভিনয় করেন। শেষ দিকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দারুণভাবে প্রশংসা পেয়েছেন। তার মেয়ে তনিমা আহমেদও অভিনয়ে আসেন। নিয়মিত বিটিভির নাটকে দেখা গেছে গেছে তাকে। এছাড়া, চলচ্চিত্রে ডাবিং শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন।

ঢাকাই সিনেমায় আনোয়ারা খ্যাতিমান একজন অভিনেত্রী হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছেন। অসংখ্য সিনেমায় তিনি একজীবনে অভিনয় করেছেন। তার মেয়ে মুক্তিও সিনেমায় অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছেন।

বিখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার কন্যা সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনয়ে এসে নতুন একটি অধ্যায় গড়ে তুলেন। নতুন একটি জেনারেশনের নেতৃত্বও দেন।

শিল্পী পরিবারের সন্তান হিসেবে অভিনয়ে আসার আরও একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে নায়করাজ রাজ্জাকের পরিবার। ঢাকাই সিনেমায় নায়ক হিসেবে রাজ্জাক ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার পুত্র বাপ্পারাজ অনেক সিনেমা করেছেন। রাজ্জাকের ছোটপুত্র সম্রাটও সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

'ড্যাশিং হিরো' হিসেবে পরিচিত নায়ক সোহেল রানার একমাত্র পুত্র সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আছেন। পরিচালক কাজী হায়াতের পুত্র কাজী মারুফও বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। নায়ক আলমগীরের কন্যা আঁখি আলমগীর শিশু শিল্পী হিসেবে সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পান। অরুণা বিশ্বাসও শিল্পী পরিবার থেকে উঠে আসা অভিনেত্রী। তার বাবা যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাস এবং মা যাত্রাশিল্পী জোছনা বিশ্বাস।

ঢাকাই সিনেমার একসময়ের সাড়া জাগানো নায়িকা সুচন্দার পুত্র তপু রায়হান কয়েকটি সিনেমা করেছেন।

টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ অভিনয়ে আসেন শিল্পী পরিবার থেকে। তার মা জিনাত বরকতউল্লাহ ছিলেন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী। তার বাবা বরকতউল্লাহ ছিলেন নামি নাট্যপরিচালক।

এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশির দুই সন্তান সৌম্য জ্যোতি ও দিব্য জ্যোতি নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করছেন। নতুন জেনারেশনের অভিনেতা হিসেবে দুজনেই পরিচিতি পেয়েছেন।

টিভি নাটকের অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দার দুই মেয়ে টাপুর ও টুপুর অভিনয়ে নাম লিখিয়েছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তারা অভিনয় করছেন।

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর একমাত্র পুত্র শুদ্ধও টিভি নাটকে নাম লিখিয়েছেন। মীর সাব্বিরের ছেলে ফারসাদ ও সানদিদ শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ে নাম লিখিয়েছেন।

অভিনয়শিল্পীর সন্তানেরা অভিনয়ে—এই ধারাবাহিকতা হয়তো চলতেই থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

3h ago