সমীক্ষা বলছে উন্নয়নের লক্ষ্য মানুষের সহায়তা, সরকার বলছে ভাবমূর্তি

নতুন একটি সমীক্ষার অবাক করা তথ্য বলছে, উন্নয়নের উদ্দেশ্য নাকি কোনো দেশের নাগরিকদের জীবনমান বাড়ানো!

বিপরীতে সরকারের ভাষ্য হলো, হেলিকপ্টার ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের ইমেজ বৃদ্ধি করাটাই উন্নয়ন।

গতকাল সমীক্ষার এই ফল প্রকাশ করা হয়েছে রাজধানীর 'উন্নয়নের শিখরচূড়া' কনভেনশন হল থেকে। উন্নয়নের জ্বলন্ত এক উদাহরণ এই হলটি, যেখানে প্রতিটি আয়োজনের জন্য ভাড়া হাঁকানো হয় ১৫ লাখ টাকা।

সমীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষকদলের প্রধান আশ চর্য ওলাম বলেন, 'প্রথমত, আপনারা যারা বলছেন যে এই গবেষণার ফল বিস্ময়কর, তাদের একটু ভুল হচ্ছে। আমরা যে এই সমীক্ষাটি চালিয়েছি এটাই তো আশ্চর্য একটা ব্যাপার। প্রাপ্ত তথ্যগুলোর আলাদাভাবে তেমন দরকার নেই।'

৫ দিন ধরে চলা এই সমীক্ষায় ব্যয় হয়েছে ১ কোটি টাকা (এই অল্প ব্যয়টুকু করা না হলে এটাকে সমীক্ষা বলাই যেত না)। এর ভেতর আছে অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর (যেগুলো উন্নয়নশীল/উন্নত) উন্নয়ন বিশারদদের কাছে করা ফোন কলগুলোও।

গবেষকদলের প্রধান বলেন, 'যখন আমরা দেখলাম জ্বালানির দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড করায় চাপাস্তানের সব সেতু জনশূণ্য হয়ে গেছে, গ্রামের দিকে মাঠে কোনো ফসলও নেই, তখন আমরা এই সমীক্ষা শুরু করি।'

আশ চর্য ওলামের ভাষ্য, 'তারপর আমরা জানলাম চাপামারা পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিপিসি) গত ৫ বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সঙ্গে মিল রেখে তারা দাম কমায়নি। এরপর গত ৫ মাসে ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসানের পর সিপিসি জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গবেষণার গভীরে ঢুকে, আসলে আমরা সেটাই তো করতে চাই, দেখলাম তাদের (সিপিসি) মুনাফার কিছু অংশ তারা অবকাঠামোর উন্নতিতে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার ফলে যে লোকসান হচ্ছে, তা নিজেরা না নিয়ে গ্রাহকদের ওপরেই চাপিয়েছেন।

'এ জন্য আমাদের মাথায় প্রশ্ন আসে, উন্নয়ন আসলে কিসের জন্য? প্রতিবেশী দেশের বিশেষজ্ঞরা তো বললেন—দেশ উন্নত হলে তাদের জনগণের জীবনমান বাড়ে। আর এই ভালো কাজের জন্য জনগণ সেই সরকারকে ভোট দেয়।'- যোগ করেন আশ চর্য ওলাম।

সমীক্ষার আগেই বিষয়টি গবেষকদল ধারণা করেছিল মন্তব্য করে তিনি জানান, তারা চাপাস্তানের নীতি-নির্ধারণী ব্যাপার-স্যাপার দেখেছেন। তাই কেবল ভালোভাবে নিশ্চিত হতেই এই সমীক্ষা করা।

এদিকে অন্য আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এনার্জেটিক ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী মিসরুল আই'মিট সমীক্ষার ফলের বিরোধিতা করেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, উন্নয়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর গুরুত্বপূর্ণ সব উন্নয়নের ক্ষেত্রেই জনগণের উপকারের বিষয়টি বোনাস।

উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'ক্লোভার লিফ ইন্টারচেঞ্জ (ক্লোভার পাতার মতো করে বানানো সড়কের বিশেষ নকশা) দেখেননি আপনারা? অথবা রাজধানী জুড়ে ফ্লাইওভারের বিশাল নেটওয়ার্ক?'

এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, সিপিসি যখন মুনাফায় ভাসছিল, তখন তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত ছিল কি না? তাতে দেশকে অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু না খাইয়ে সংকট মোকাবিলা যেত।

সাংবাদিকদের এই কথায় রেগে যান মন্ত্রী। বলেন, 'আপনারা আমাদের কায়দা-কৌশলের কিছুই জানেন না। স্যাটেলাইট ইমেজে যখন আমাদের উন্নয়নের লেভেলটা দেখায়, আর দেখায় অসংখ্য সেতু-ফ্লাইওভার ও জনশূণ্য রাস্তা, তখন উন্নত দেশগুলো ভাবে আমরাও ওদের মতো উন্নত। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়ে। কিন্তু আপনাদের মত মানুষগুলো কিছুই বোঝে না। তাই আমি এখানে চিৎকার করছি। আর আপনারা ওখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।'

অনুবাদ করেছেন মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

1h ago