হরতাল-অবরোধ দেওয়া নিয়ে দ্বিধায় বিএনপি

বিএনপির অবরোধ

বিএনপি নেতারা সম্প্রতি টানা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিলেও হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে দলটি দ্বিধায় রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চলাকালে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ায় তারা হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে দ্বিধাবোধ করছে।

তবে, একইসঙ্গে শীর্ষ নেতাদের অনেকেরই উপলব্ধি, ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ জনসমর্থন পেতে পারে। কিন্তু এতে সরকার পদত্যাগের জন্য কোনো চাপ অনুভব করবে না।

'এ অবস্থায় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। তবে এ ধরনের কর্মসূচি বেশিদিন করা যাবে না', দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা।

এ ছাড়া দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং হরতালের মতো ঘটনা মানুষের জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এটি শেষ পর্যন্ত আমাদের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।'

গত দেড় বছর ধরে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস উপায়ে সারা দেশে সমাবেশ ও মিছিলের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি।

তাদের শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি সর্বত্র প্রশংসিত হলেও বিএনপি যা চায়, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তা পাবে না বলে মনে করছেন দলের একাধিক নেতা।

এক পর্যায়ে বিএনপির অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির ওই নেতা আরও বলেন, 'হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিলে তা সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে হবে এবং শুধুমাত্র শেষ উপায় হিসেবে এই ধরনের কর্মসূচিতে দেওয়া হবে।'

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপির ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচিতে জনগণের জীবনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি।

গত সপ্তাহে দলটি জানায়, আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে তারা বিরতিহীন কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে হরতাল বা অবরোধের কথা উল্লেখ করেননি।

বিএনপি নেতারা নিশ্চিত যে, তারা যখনই হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করবে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তখন থেকেই ২০১৪ সালের সেই অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ তুলতে থাকবে।

আন্দোলন বেগবান হলেই হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান বিএনপির এক নেতা।

দলের কয়েকজন নেতা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও ও প্রধানত ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব শুরু হবে।

সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির ধারাবাহিক সংলাপে হরতালের মতো কর্মসূচির সুপারিশ করা হয়।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ডেইলি স্টারকে বলেন, কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত কেঁপে উঠে। কিন্তু সেক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ অনিবার্য।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কিন্তু এই কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে যথেষ্ট বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দল কী কর্মসূচি ঘোষণা করবে, তা বলা মুশকিল। কারণ সরকার বিক্ষোভে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার ওপর আন্দোলনের ধরন নির্ভর করবে।'

'আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং সেভাবেই চলবে। কিন্তু হামলা হলে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার আমাদের আছে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

1h ago