আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে সেরা সূচনা হলো: আদনান আল রাজীব

এ বছর ৭৭ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৩ তম ‘সিমেইন দি লা ক্রিটিক’ (এসডিএলসি) এ আদনান ও তানভীর হোসেইনের সহ-প্রযোজনায় ফিলিপাইনের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘র‍্যাডিকালস’ ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার এর জন্য মনোনীত হয়েছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে আদনান আল রাজীব। ছবি: সংগৃহীত

মিডিয়ায় আদনান আল রাজীবের যাত্রা শুরু হয় মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর সহকারী হিসেবে। 'অল-টাইম দৌঁড়ের উপর', 'মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট' ও 'বিকাল বেলার পাখি'র মতো জনপ্রিয় নাটক পরিচালনা করে নির্মাতা হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।

অনন্য প্রতিভা কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে বিজ্ঞাপনের জগতেও জায়গা করে নিয়েছেন আদনান। গত এক বছর প্রযোজক হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করেছেন, 'মহানগর' ও 'প্রিয় মালতী'র মতো বেশ কিছু ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা সহ-প্রযোজনা করেছেন। মেধা ও মননের সমন্বয়ে বর্তমানে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন তিনি।

এ বছর ৭৭ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৬৩ তম 'সিমেইন দি লা ক্রিটিক' (এসডিএলসি) এ আদনান ও তানভীর হোসেইনের সহ-প্রযোজনায় ফিলিপাইনের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা 'র‍্যাডিকালস' ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার এর জন্য মনোনীত হয়েছে।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া, নিজের প্রযোজিত সিনেমা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আদনান আল রাজীব।

'র‍্যাডিকালস' প্রযোজনার ব্যাপারে কিছু বলুন। পরিচালক আরভিন বেলারমিনোর সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হলো?

আদনান: প্রায় ৬ মাস আগে তানভীর হোসেইন আমাকে এই প্রজেক্টটি সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তিনি সহ-প্রযোজক হিসেবে প্রজেক্টটির সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন, আমি প্রজেক্টটিতে অংশ নিতে আগ্রহী কি না জানতে আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখনই আরভিন ও প্রযোজক ক্রিস্টিন ডি লিওনের সঙ্গে পরিচয় হয়। আরভিনের চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বতন্ত্র্য একটি স্টাইল আছে, যা অতুলনীয়। আমার কাছে সহ-প্রযোজনা হলো সিনেমা জগতে একে অন্যের বিকাশে সাহায্য করার একটি উপায়।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে কেমন লাগছে?

আদনান: অবিশ্বাস্য লাগছে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে সেরা সূচনা হলো। এই মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হতে পেরে আমরা ভাগ্যবান। 'এসডিএলসি'র পরিচালকদের আমি অনেকদিন ধরেই অনুসরণ করছি, তাদের নির্বাচিত সিনেমার ভক্ত আমি। তারা যে আমাদের সিনেমাটি নির্বাচন করেছেন, এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার।

'র‍্যাডিকালস' কবে প্রদর্শিত হবে?

আদনান: 'র‍্যাডিকালস' এর প্রথম প্রদর্শনী আগামীকাল। সিনেমাটির দুটি প্রদর্শনী হবে, ২৪ মে এর দ্বিতীয় প্রদর্শনী। পুরো টিমের সাথে এই অভিজ্ঞতার অংশ হতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত।

উৎসবে অংশ নিয়ে কেমন লাগছে?

আদনান: প্রথম দিন আমি উত্তেজনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেকটা সময় লেগেছিল। উৎসবের বিভিন্ন বিভাগের প্রযোজক, সমালোচকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিনই সিনেমা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি আন্তর্জাতিক সিনেমার বাজারে নেটওয়ার্কিং বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। থিয়েটারে আমি দারুণ কিছু সিনেমাও দেখেছি। এখানে মজার মজার খাবার খেয়ে, নেটওয়ার্কিং করে, সিনেমা দেখে ও বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে বেশ ভালো সময় কাটছে আমার।

বাংলাদেশে প্রযোজকের ভূমিকা নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। তাদেরকে বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখা হয়। প্রযোজকদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলবেন?

আদনান: আইডিয়া বিকাশের পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাক-প্রযোজনা, প্রযোজনা এমনকি প্রযোজনা-পরবর্তী পর্যায়, যোগাযোগ, বন্টন ও মার্কেটিং ও আর্থিক তত্ত্বাবধান- এসব কিছু নিয়েই একজন প্রযোজকের ভাবতে হয়। যেকোনো প্রজেক্টের জন্য সবচেয়ে ভালো ফলাফল নিশ্চিত করা প্রযোজকের কাজ। শুধু টাকা বিনিয়োগ করে, প্রজেক্ট সম্পর্কে কোনো কিছু না বুঝে হস্তক্ষেপ করা তার কাজ না।

উদীয়মান পরিচালক ও প্রযোজকদের জন্য কোনো উপদেশ আছে?

আদনান: উদীয়মান পরিচালকদের আমি বলবো, এমন গল্প বানানোর দিকে মনোযোগ দিন যা আপনি বিশ্বাস করেন। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দিয়ে হলেও শুরু করুন। নিজের ভুলগুলো থেকেই আপনি শেখার সুযোগ পাবেন, তাই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন। আবার কবে আপনাকে পরিচালনায় দেখতে পাবো?

আদনান: এখানে আসার পর, আমি অনেক প্রযোজক ও প্রোগ্রামারদের সাথে কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব পরিচালনায় ফিরতে চাই। আমি বেশ কিছু চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছিলাম, সেগুলো তৈরি। আশা করি, শিগগিরই দর্শকরা কাজগুলো দেখতে পারবেন।

Comments