মৃণাল সেন চরিত্রে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রথমে বিশ্বাস করিনি: চঞ্চল চৌধুরী
প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃণাল সেনের চরিত্রে 'পদাতিক' সিনেমায় অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। গতকাল পদাতিক সিনেমার টিজার প্রকাশের পর প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
শিল্পী, পরিচালক, বন্ধু, ভক্ত সবাই তার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন। নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ফেসবুকে লিখেছেন, 'ওয়েটিং, ওয়েটিং, ওয়েটিং , লাভ অ্যান্ড প্রেয়ারস।'
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সুবর্ণা আপা থেকে শুরু করে অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সবার প্রতি ভালোবাসা। আমার জন্য অনেক পাওয়া।'
তিনি আরও বলেন, 'একটা ভালো কাজ করলে সবাই অংশীদার হয়ে উঠে, এটা তো অনেক বড় বিষয়। যে কেউ ভালো কাজ করুক না কেন, এমনই হওয়া উচিত। তাহলে আরও দশটা ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন নির্মাতা ও শিল্পীরা। ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাবে।'
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'আমি বাংলাদেশের একজন অভিনেতা। পরিচালক সৃজিত মুখার্জি ভারতবর্ষ থেকে কাউকে নিতে পারতেন। তিনি আমাকে চূড়ান্ত করেছেন। বাংলাদেশের ও কলকাতার যেসব দর্শকরা আমাকে ভালোবাসেন, পছন্দ করেন, তারা কিন্তু আমাকে জানেন। এখানেই আমার চ্যালেঞ্জটা ছিল, ভালো করতেই হবে। যদি ভালো করি তাহলে প্রাপ্তিটা বাংলাদেশের এবং আমার ইন্ডাস্ট্রির।'
'মৃণাল সেন চরিত্রে যতটুকু প্রাপ্তি তা বাংলাদেশের, তারপর আমার', যোগ করেন তিনি।
চঞ্চল চৌধুরী মৃণাল সেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ কথা সবার জানা থাকলেও অনেকেই জানেন না প্রথমদিকে তিনি না করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, 'মৃণাল সেন কীভাবে হব? এতবড় একজন মানুষ! তখন সৃজিত দা বলেন, আমার ওপর ছেড়ে দিন। এখন নি:সন্দেহে বলতে পারি, পদাতিকের মৃণাল সেন সৃজিত মুখার্জির হাতে তৈরি। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।'
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'মনামী ঘোষ আমার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। খুব ভালো অভিনয় করেছেন। সব সহশিল্পীরা ভালো করেছেন। সবার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ভালো। এই সিনেমায় অনেক বড় বড় চমক আছে, যা মুক্তির পর জানা যাবে।'
চমকের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, 'সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটকের মতো বিখ্যাত পরিচালকদের চরিত্র আছে এই সিনেমায়। সেটা দেখতে পারবেন দর্শকরা। চমকগুলো থাকুক। অনেক চরিত্র এসেছে।'
ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তিনি বলেন, 'অনেক পেশাদার ইন্ডাস্ট্রি ওরা। এটা ভালোলাগার বিষয়।'
মৃণাল সেন হয়ে উঠার বিষয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'একটা সত্যি কথা বলি। মৃণাল সেন চরিত্রে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রথমে বিশ্বাস করিনি। যাই হোক, পরে সবকিছু হলো। সমস্ত মনোযোগ ছিল মৃণাল সেনের চরিত্রে। এটা তো এক বা দুই দিনের বিষয় না। দিনের পর দিন আমাকে চরিত্রটির জন্য সময় দিতে হয়েছে।'
পদাতিকের মৃণাল সেন সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, 'মৃণাল সেনের উঠা-বসা, হাঁটাচলা,কথা বলা সবকিছু জানতে হয়েছে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে। সৃজিত মুখার্জি সহযোগিতা করেছেন।'
পদাতিক সিনেমার শুটিংয়ের সময় চঞ্চল চৌধুরীর বাবা মারা যান। তারপরও শুটিং থেমে থাকেনি।
সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'বাবা মারা গেলেন। শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি তখন। সৃজিত দা বললেন, আমার ওপর ছেড়ে দিন। তারপর বললেন, ক্যামেরার সামনে আপনি মৃণাল সেন। বাকি সময়টা আপনার মতো থাকুন। এটা মাথায় নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। সৃজিত মুখার্জি একজন গ্রেট ডিরেক্টর।'
'আপনার সিনেমা ভাগ্য কি খুব ভালো?' এমন প্রশ্নের উত্তরে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'কর্ম দিয়ে ভাগ্য নির্ধারণ করতে হয়। আমার কাছে শত শত সিনেমার প্রস্তাব আসে, কিন্ত আমি বেছে বেছে কাজ করি। পদাতিক করার পর সিনেমার জন্য অনেক সময় নিয়েছি। একজন শিল্পীর জন্য সিনেমা সিলেকশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমি মনে করি।'
আগামী জুলাই মাসে পদাতিক সিনেমা শিকাগোর একটি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেবে। সেখানে মৃণাল সেনের ছেলে কুনাল সেন থাকেন। কুনাল সেন সিনেমাটি প্রথমে দেখবেন। বিশেষ প্রদর্শনী হবে। চঞ্চল চৌধুরী অংশ নেবেন সেখানে।
Comments