‘মোহন ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন’

প্রয়াত মোহন খান। ছবি: সংগৃহীত
প্রয়াত মোহন খান। ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক মোহন খান মারা গেছেন গতরাতে। তার নাটকে অভিনয় করেছেন অসংখ্য অভিনয়শিল্পী। তার হাত ধরে উঠে এসেছেন অনেক অভিনেতা। এই পরিচালকের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক ছিল অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের। মোহন খানকে নিয়ে মাহফুজ আহমেদ স্মৃতিচারণ করেছেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

মাহফুজ আহমেদ বলেন, আমি যখন অভিনয় শুরু করিনি, আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি এবং বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করি, সে সময় হঠাত একদিন পরিচয় হয় নাট্যপরিচালক মোহন খানের সঙ্গে। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং একসময় সাংবাদিকতা করতেন। পরিচয় হওয়ার পর সখ্যতা হতে বেশি সময় লাগেনি। ধীরে ধীরে ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে তার সঙ্গে।

বহুবছর আগে তিনি একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। আমাকে একদিন ডাকেন। তারপর সেখানে কাজের সুযোগ দেন। আরও পরে আমি সাপ্তাহিক পূর্ণিমা পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিই। সেই গল্প আরেক দিন করব। আজ শুধু মোহন ভাইকে নিয়ে বলি।

আমার সারাজীবনে তার মতো হাসিখুশি মানুষ কম দেখেছি। যেকোনো মানুষকে আপন করে  কাছে টেনে নেওয়ার প্রবল গুণ নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন। এটা সবার মধ্যে থাকে না। তার ভেতর ছিল। দেখতে সুদর্শন, স্মার্ট, পড়ালেখা জানা মানুষটির ভেতরটাও সুন্দর ছিল।

অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

তার সঙ্গে আমার পরিচয়টা আজকের নয়। দশ কিংবা বিশ বছরেরও নয়। অভিনেতা হওয়ার আগেই পরিচয়। কি করে তার মুখ ভুলি? খবরটা শোনার পর থেকে তার হাসিমাখা মুখটা বারবার ভাসছে আমার চোখে। আপনজন মারা গেলে কি হয়? প্রচণ্ড কষ্ট হয়। আমারও তাই হচ্ছে। আমি কেবলই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করছি। আর ভাবছি, এত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন মোহন ভাই? এতই তাড়া ছিল?

নিজেকে কি বলে সান্ত্বনা দেব? কোনোভাবেই পারছি না। একটি কথা শুধু মনে হচ্ছে, যে মানুষটির সঙ্গে আমার এত বছরের সম্পর্ক, এত সুন্দর সম্পর্ক, তার সঙ্গে কেন গত কয়েকটি বছর দেখাই হলো না? তার শেষ সময়েও দেখা হলো না? এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি আমরা? আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি বলেই তো তার খোঁজ নিইনি। কিন্ত নেওয়া উচিত ছিল। জানি না তিনি  ক্ষমা করবেন কি না? তারপরও দূর থেকে বলব, মোহন ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন। অনন্তলোকে আপনি আগের মতোই হাসি খুশি থাকবেন, এই কামনা করি।

মানুষের জীবনে টানাপড়েন থাকে। আমার জীবনেও ছিল। সফলতা একদিনে আসেনি। বহু বছর লেগেছে। একটি ঘটনা বলি। বিয়ের পর বা সংসার জীবনে স্ত্রীকে নিয়ে খুব বেশি মানুষের বাসায় যাইনি। কম মানুষের বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছি। তো, বিয়ের পর গেলাম মোহন ভাইয়ের বাসায় দেখা করতে। তার স্ত্রী একজন অসাধারণ ভালো মানুষ। তার দুই সন্তানকে জন্মাতে ও বড় হতে দেখেছি  চোখের সামনে। সুন্দর একটা সংসার ছিল তার।

যেদিন স্ত্রীকে নিয়ে তার বাসায় গিয়েছিলাম, তিনি হয়ত আমার মুখ দেখে বুঝতে পেরেছিলেন সংসার জীবনে টানাপড়েন যাচ্ছে। তিনি হয়ত আমার মুখ দেখে বুঝতে পেরেছিলেন অর্থ কষ্টে আছি। ফেরার সময় একটি খাম দেন তিনি। পরে সেই খাম খুলে  দেখি দশ হাজার টাকা দিয়েছেন। কত বড় মন হলে এটা সম্ভব। ওই ঘটনা আমি কোনোদিনও ভুলতে পারব না। যতদিন বাঁচব মনে পড়বে।

আমার একটাই কষ্ট থেকে গেল, একটাই আফসোস থেকে গেল--কেন তার সঙ্গে আমার দেখা হলো না? প্রকৃতির কাছে আমরা অসহায়! প্রকৃতি হয়ত চায়নি? নিয়তি হয়ত চায়নি? কিন্ত দেখা করাটা উচিত ছিল। তার খোঁজ নেওয়াটা প্রয়োজন ছিল। সেজন্য আবারো বলছি, মোহন ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনার মুখ আমি কেমন করে ভুলি?

--

Comments

The Daily Star  | English
bad loans rise in Bangladesh 2025

Bad loans hit record Tk 420,335 crore

It rose 131% year-on-year as of March of 2025

10h ago