প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর প্রথমে মেয়ের মুখ দেখি: বাঁধন
আজমেরী হক বাঁধন 'রেহানা মরিয়ম নূর' সিনেমা দিয়ে পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পেয়েছেন এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড। বাংলাদেশি এই তারকা বলিউডেও যাত্রা শুরু করেছেন ওয়েব ফিল্ম 'খুফিয়া' দিয়ে, যা মুক্তি পাবে আগামী বছর। তার নতুন ওয়েব সিরিজ 'গুটি' মুক্তি পাবে নতুন বছরে।
চলচ্চিত্র ও নানা বিষয় নিয়ে বাঁধন কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
নারী স্বাধীনতায় কতটা বিশ্বাসী?
বাঁধন: শুধু নারী স্বাধীনতায় নয়, আমি মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। নারী বা পুরুষ নয়, সবার আগে আমরা মানুষ। মানুষ হিসেবে দেখলে কোনো সমস্যা হয় না। ভেদাভেদ করতে চাই না। প্রতিটি মানুষ তার অধিকার পাওয়ার যোগ্য। এটাই হওয়া উচিত। সেজন্য আমি মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সবার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী।
রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমা দিয়ে আপনার অর্জন?
বাঁধন: সত্যি কথা বলতে রেহানা মরিয়ম নূর আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। দেশকে সম্মানিত করেছি আমার এই চলচ্চিত্রের ভেতর দিয়ে। যখন সিনেমাটি কানে সিলেক্টেড হলো, তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কত খুশি হয়েছি। এরপর কানে গেলাম। ওখানে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল, আমার মেয়ের জন্মের সময় যেমন অনুভূতি হয়েছিল, একই রকম অনুভূতি। এটা আমার জন্য বড় অ্যাচিভমেন্ট। এই জার্নি আমাকে সমৃদ্ধ করেছে একজন শিল্পী হিসেবে।
দেড় বছর টানা ঘুরেছি বিভিন্ন দেশের উৎসবে সিনেমাটি নিয়ে। একা একা ঘুরেছি। এটা আমার সৌভাগ্য। যেখানেই গিয়েছি, বড় বড় মানুষে সঙ্গে মিশেছি, সিনেমা নিয়ে কথা বলেছি, মত বিনিময় করেছি, রিলেশন ডেভলপ করেছি। তারা জেনেছেন আমার কাজ সম্পর্কে, আমাকে তারা চিনেছেন। আমার দেশের সিনেমা নিয়ে জেনেছেন। এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ আমার টিমের প্রতি। এই সবই শিল্পী জীবনকে প্লাস করেছে।
আপনার জীবনের জার্নিটা কেমন?
বাঁধন: প্রতিটি মানুষের জীবনে আলাদা আলাদা জার্নি থাকে। একেক জনের জার্নি একেক রকম। অনেক মানুষের জার্নি ও কথা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। বহু মানুষ পেয়েছি আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখি। আমার জার্নি আলাদা ও স্ট্রাগল আলাদা।
আবার আমার জার্নিটা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। অনেকে আমাকে বলেন, আমি বা আমার চলার পথ কিংবা আমার কাজ তাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই কথা আমাকে আপ্লুত করে। কেউ কেউ বলেছেন আমি তাদের সামনে চলার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছি। তখন আমার জার্নিটায় তৃপ্ত হয়েছি।
বিশ্বকে নিয়ে আপনার চাওয়া কী?
বাঁধন: আমি চাই শান্তির পৃথিবী। বিশ্বের নানা জায়গায় আশান্তি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে । এর প্রভাব ৫০ বছর পর কী হবে তা ভাবা দরকার। পরের জেনারেশনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের কতটা প্রভাব পড়বে তার জন্য এখনই কাজ করা উচিত। সব মিলিয়ে আমি চাই শান্তির পৃথিবী।
সকালবেলা যে কারণে আপনার মন ভালো হয়ে যায়?
বাঁধন: প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর প্রথমে মেয়ের মুখ দেখি। চোখ খুলেই দেখি মেয়ের মুখ। তখনই মনটা ভালো হয়ে যায়।
আগামীর কাজ নিয়ে ভাবনা?
বাঁধন: সত্যি কথা বলতে আমাদের এখানে নারী প্রধান গল্পের কাজ কম হচ্ছে। হতে পারে এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এখানে কিন্তু প্রচণ্ড ট্যালেন্টেড পরিচালক আছেন, স্ক্রিপ্ট রাইটার আছেন, ক্যামেরাম্যান আছেন, অভিনয়শিল্পী আছেন। যারা এখানে পৃষ্ঠপোষক তাদের চিন্তার জায়গাটা পরিবর্তন করতে হবে। লগ্নি করা যে শুধু ব্যবসা নয়, সমাজের কাছে দায়বদ্ধতাও— তা বুঝতে হবে। ব্যবসা করেও দেশের প্রতি ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
একজন শিল্পী হিসেবে আপনার দায়বদ্ধতা কতটুকু?
বাঁধন: শিল্পী হিসেবে শুধু নয়, এদেশের একজন মানুষ হিসেবে আমার দায়বদ্ধতা আছে। সেটা দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি। পরিবারের প্রতিও আছে। আমি দেশকে ভালোবাসি, মানুষকে ভালোবাসি, সমাজকে ভালোবাসি। এজন্য দায় নিয়ে কাজ করি। প্রতিটি মানুষ যদি দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে সততার সঙ্গে কাজ করে যান তাহলেই দেশ সুন্দর হবে আরও।
Comments