বেক্সিমকোর ১৫ পোশাক কারখানার ৪০ হাজার কর্মী ছাঁটাই

বেক্সিমকো

গাজীপুরে রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলো কার্যাদেশ পায়নি—এমন কারণ দেখিয়ে বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠী তাদের ১৫ পোশাক কারখানার প্রায় ৪০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর জারি করা বিজ্ঞাপ্তিতে শিল্পগোষ্ঠীটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ছাঁটাই কার্যকরের কথা জানানো হয়।

এতে আরও বলা হয়, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের কারখানায় রিপোর্ট করার প্রয়োজন নেই। কেননা, আগামী ৩০ জানুয়ারি আবার কারখানা খোলার সম্ভাব্য তারিখ পর্যন্ত সব ধরনের উৎপাদন কাজ বন্ধ থাকবে।

৪৫ দিনের ছাঁটাইয়ের সময়কালে কর্মীদের বেতন সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে শ্রম আইনের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মূল বেতনের অর্ধেক ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বেক্সিমকোর অর্থ ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় উৎপাদন চালানো যাচ্ছে না।'

কারখানাগুলোর মধ্যে আছে—শাইনপুকুর গার্মেন্টস, আরবান ফ্যাশনস, ইয়েলো অ্যাপারেলস, প্রিফিক্স ফ্যাশনস, আরআর ওয়াশিং, বেক্সিমকো ফ্যাশনস, বেক্সিমকো গার্মেন্টস, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস, এসেস ফ্যাশনস, এসকর্প অ্যাপারেলস, ক্রিসেন্ট ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন ও ক্রিসেন্ট এক্সেসরিজ লিমিটেড।

বাকি দুই কারখানার নাম জানা যায়নি।

ওসমান কায়সার চৌধুরী আরও বলেন, 'ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকরা গত নভেম্বরে পুরো বেতন পেয়েছেন। সরকারি সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।'

বেক্সিমকো মোট ৭০ হাজার কর্মীর মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি জনকে ছাঁটাই করেছে।

গতকাল বুধবার এই বেক্সিমকো কর্মকর্তা জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরামর্শ দিয়েছিল। কারণ সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য নগদ সহায়তা দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটিও কর্মীদের বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবে দিতে পারছে না।

গত আগস্টে গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিল্পগোষ্ঠীটি সংকটে পড়ে। এর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা ছিলেন।

সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক লাভের জন্য রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সালমান এফ রহমান ও তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের সঙ্গে জড়িত একের পর এক আর্থিক অনিয়ম প্রকাশ্যে আসছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত নভেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেকের বেশি খেলাপি হয়ে পড়েছে।

আর্থিক বিবরণীতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেক্সিমকো ৩৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে। আগের অর্থবছরের মুনাফা হয়েছিল ৭১০ কোটি টাকা।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারল্য সংকট, কার্যাদেশ কমে যাওয়া ও বকেয়া মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত নভেম্বরে শিল্প গোষ্ঠীটি পরিচালনার জন্য রিসিভার নিয়োগ করে।

এরপর থেকে জনতা ব্যাংক শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য শিল্পগোষ্ঠীটিকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এর পরিমাণ প্রতি মাসে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারল্য সহায়তা আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়।'

তার মতে, বেক্সিমকোর পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলোর ব্যাপক আর্থিক চাহিদার কারণে সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থায়ন করতে পারছে না।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বেক্সিমকোর ওষুধ ও সিরামিকস কারখানায় উৎপাদন চলমান থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের রিসিভার রুহুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কার্যাদেশ না থাকায় পোশাক কারখানাগুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে। উৎপাদন আবার শুরু করার জন্য তহবিল সংগ্রহ না করা পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।'

শিগগিরই কারখানা খোলার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, 'বেক্সিমকোর শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আবার কার্যক্রম চালু করতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করছে।'

তবে কারখানা খোলার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার।

তিনি বলেন, 'বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও দেশীয় ক্রেতারা বেক্সিমকোর সাম্প্রতিক অগ্রগতির দিকে নজর দিয়েছে। সম্ভবত রপ্তানি আদেশ না আসায় প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।'

এর আলোকে বকেয়াদি পরিশোধ করে শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের পরামর্শ দেন বাবুল আক্তার।

তিনি শ্রম পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়ার বার্তা বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডগুলোর কাছে পৌঁছানোর পরামর্শও দেন।

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

24m ago