পলিথিন ব্যাগে নিষেধাজ্ঞা

চাহিদার সঙ্গে পাটের দাম মনপ্রতি বেড়েছে ৬০০ টাকা

পাট
সরকার পলিথিন ব্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বেড়েছে পাটের চাহিদা, বেড়েছে দামও। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী উপজেলার জামালপুর পাট বাজারে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

অন্তর্বর্তী সরকার পলিথিন ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাজারে পাটের চাহিদা বেড়েছে। তবে জোগান কম থাকায় ভালোমানের পাট গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

দেশের অন্যতম প্রধান পাট-উৎপাদনকারী জেলা ফরিদপুরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এই বছর পাটের উৎপাদন অনেক কম। কারণ হিসাবে কৃষকেরা বলেছেন গত মার্চ-এপ্রিলে পাট রোপণের সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালোভাবে হয়নি।

এ ছাড়াও, বিগত বছরগুলোয় পাটের দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশে পাটের উৎপাদন কমেছে।

বাংলাদেশ পাট অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে পাট উৎপাদন হয়েছিল ৮৪ লাখ ১৪ হাজার (প্রায় ১৮২ কেজিতে এক বেল)। চলতি অর্থবছরের এসে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ ৭৪ হাজার বেল।

পাট চাষি ও ব্যবসায়ীদের মতে, সরকার গত অক্টোবর থেকে সুপারমলে ও গত ১ নভেম্বর থেকে সারাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করায় পাটের দাম বেড়েছে।

তারা জানান, বর্তমানে সবচেয়ে ভালোমানের পাট মনপ্রতি তিন হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে তা ছিল তিন হাজার ২০০ টাকা।

মাঝারিমানের পাট দুই হাজার ৬০০ টাকা থেকে হয়েছে তিন হাজার ২০০ টাকা।

পাট
জলবায়ুর প্রভাবে এ বছর পাটের উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফরিদপুরের কানাইপুর পাট হাট। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

ফরিদপুরের কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী মো. আরিফুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মান ও রঙের ওপর নিভর করে প্রতি মন পাট ফরিদপুরে তিন হাজার ২০০ টাকা থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা।'

দেশের অপর প্রধান পাট উৎপাদনকারী জেলা পাবনার পাট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মাহমুদুর নবী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাটের দাম বেড়েছে মূলত চাহিদার জন্য। দাম বাড়লেও অনেক কৃষক পাট চাষে তেমন লাভ করতে পারেননি। পাট কাটার পর সার ও শ্রমিকের টাকা পরিশোধে অনেককে কম দামে পাট বিক্রি করতে হয়েছে।'

রাজবাড়ী জেলার জামালপুর পাট বাজারের ব্যবসায়ী পঞ্চানন দাস ডেইলি স্টারকে জানান, বর্তমানে মাত্র ১০-১২ শতাংশ কৃষকের হাতে পাট মজুদ আছে। বাকিটা ছোট ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়েছেন।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ছোট বাহিরদিয়া গ্রামের চাষি ইসরাত মাতুব্বর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের এলাকার বেশিরভাগ কৃষক পাট কাটার পরপরই কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে বিক্রির জন্য অনেকে কয়েক মন পাট ধরে রেখেছেন।'

সম্প্রতি তিনি তিন হাজার ৮০০ টাকা মন দরে তিন মন পাট বিক্রি করেছেন। আগামী বছর আবার পাট চাষে উৎসাহিত হয়েছেন তিনি।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা মাগুরার রাউতারা গ্রামের কৃষক নব কুমার কুণ্ডু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। প্রায় ৫০ নণ পাট পেয়েছি। একই পরিমাণ জমিতে আগে ৯৬ মন পাট পেয়েছিলাম।'

তিনি জানান, এ বছর ফলন কম হলেও পাটের আঁশের মান অনেক ভালো। তাই বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে।

পাট
ন্যায্য দাম পেলে কৃষকরা পাট উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন বলে মত দিয়েছেন পাটকল মালিকরা। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

ফরিদপুরের হাট কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জাহিদ শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সার, সেচ ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বিঘা পাট চাষে খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর এক মন পাট উৎপাদনে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। বর্তমানে যে দাম পাচ্ছি তাতে কিছুটা লাভ হচ্ছে। তবে দাম কমলে ভবিষ্যতে পাট চাষ কঠিন হবে।'

ফরিদপুরের পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও পাট চাষের প্রথম দিকে তাপমাত্রার জন্য চারা ভালো হয়নি, তবে পাট জাগ দেওয়ার সময় বেশি বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা এ বছর ভালোমানের পাট পেয়েছেন। তাই দাম ভালো।'

পাটকলের মালিক ও করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারখানার মালিকরা কৃষকদের ন্যায্য দাম দিতে চান। তারা ন্যায্য দাম পেলে পাট উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। মালিকরা পাট পণ্য রপ্তানি ও কারখানা চালু রাখতে পারবেন।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh RMG sector

RMG sector on edge as tariff talks make no headway

The diverging outcomes threaten to create a multi-tiered tariff landscape in Asia, placing nations like Bangladesh at a serious disadvantage in the US market.

11h ago