চীনের কাছে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো ও সুদ কমানোর আহ্বান

বর্তমানে, চীনা ঋণের সুদের হার দুই থেকে তিন শতাংশ এবং পরিশোধের সময়কাল ২০ বছর।
খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চলমান চীনা ঋণের সুদের হার এক শতাংশে নামিয়ে আনতে ও ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ বছর করতে চীনকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন,  ইআরডি চলতি সপ্তাহের শুরুতে বেইজিংকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে।

বর্তমানে, চীনা ঋণের সুদের হার দুই থেকে তিন শতাংশ এবং পরিশোধের সময়কাল ২০ বছর।

ইআরডি কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি চলমান চীনা ঋণের জন্য সুদের হার কমাতে না পারে, তাহলে চীন থেকে নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সময় ও কম সুদের জন্য চেষ্টা করা হবে।

বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে রাশিয়া এবং চীন থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদের হার কমানো এবং ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সকল উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরকালে ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে পরবর্তী চার বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

পরে ঋণের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকল্পভিত্তিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ইআরডির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা ও বেইজিং মাত্র নয়টি প্রকল্পে আট দশমিক আট বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করতে পেরেছে।

আট দশমিক আট বিলিয়ন ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করতে পেরেছে, যা চীনের প্রতিশ্রুত অর্থের এক-চতুর্থাংশেরও কম।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাকি ১৮টি প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

রাশিয়ার সঙ্গে ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, 'রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রিমের অর্থ পরিশোধ এবং বকেয়া পাওনা নিয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচনা চলছে।'

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মস্কোর ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ মেটাবে। এছাড়া প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের জন্য বাংলাদেশ ৫০০ মিলিয়ন ডলার রুশ ঋণ নিয়েছে।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ ও সুদ পরিশোধে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।

এতে রাশিয়ার পাওনা এখন পর্যন্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশের ভিত্তিতে, সরকার বকেয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা অ্যাকাউন্টে আলাদা করে রাখছে। যখনই অ্যাকাউন্টে অর্থ যোগ হয়, রাশিয়া তখন একটি নোটিশ পায়।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরের বছর থেকে ঋণের অর্থ বিতরণ শুরু করে দেশটি।

চুক্তি অনুযায়ী, সরকারকে ২০ বছরের মধ্যে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে ২০৪৭ সালের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৭ সালে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হবে।

রাশিয়ার ঋণের সুদের হার লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফারড রেটের সঙ্গে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগ হবে। তবে সুদের হার ৪ শতাংশের বেশি হবে না।

ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চীনা ইউয়ানে ঋণ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে রাশিয়া বাংলাদেশকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে।

এদিকে বকেয়া অর্থ, জরিমানা চার্জ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ে আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পরিশোধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবে না এমন একটি সমাধান দিতে রাশিয়াকে অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশে কর্মরত রাশিয়ান ঠিকাদারদের অর্থ সময়মতো পরিশোধ করা হচ্ছে।

এদিকে রাশিয়ান ঋণের সুদের হার বর্তমানে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। তাই ইআরডি রাশিয়াকে সুদের হার ও জরিমানা কমানোর অনুরোধ জানাবে বলে জানান তিনি।

Comments