৩ মাসে বাতিল হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার বিমা পলিসি

বিমা পলিসি
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গ্রাহকের আর্থিক অবস্থার অবনতি, পলিসি বিক্রির সময় গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য প্রকাশ না করা ও অন্যান্য কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের ৩৬ জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন লাখ ৬৪ পলিসি বাতিল হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৬৭ হাজার ৫৫৫ পলিসি বাতিল হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ।

দ্বিতীয় স্থানে আছে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স। এর পলিসি বাতিল হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৮১টি। আর আইডিআরএ'র তথ্য অনুসারে, ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের পলিসি বাতিল হয়েছে ৩১ হাজার ৬৬৭টি। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান তৃতীয়।

পলিসি তখনই বাতিল হয় যখন গ্রাহক সময়মতো প্রিমিয়াম শোধ করতে ব্যর্থ হন।

দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার পরিবারের ছয় সদস্য প্রতিষ্ঠানটির ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার পর এস এম ফেরদৌসকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।

এদিকে, ডেল্টা লাইফ ইনসিউরেন্সের প্রধান নির্বাহী আনোয়ারুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির পলিসি ছিল ১৩ লাখ ৪৩ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার পলিসি বাতিল হয়েছে।'

তার মতে, 'পলিসির সংখ্যা যত বেশি হবে, তত বেশি বাতিল হবে। এটাই স্বাভাবিক।'

'গ্রাহকদের একটি অংশকে চাপ না দিলে তারা সময়মত প্রিমিয়াম দেয় না। তাদেরকে চাপ দেওয়ার দায়িত্ব এজেন্টদের। এরপরও গ্রাহকরা টাকা দিতে ব্যর্থ হলে পলিসি বাতিল হয়,' যোগ করেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'পলিসির চালুর প্রথম বছর এজেন্টরা যে পরিমাণ কমিশন পান দ্বিতীয় বছরে পান এর চেয়ে কম। ফলে তারা বিদ্যমান পলিসি নবায়নের চেয়ে নতুন পলিসি বিক্রিতে বেশি আগ্রহী।'

'এজেন্টরা অনেক সময় পলিসি বিক্রির সময় সব নিয়ম গ্রাহকদের জানান না। অনেক এজেন্ট এমন পলিসি বিক্রি করে থাকতে পারে যা গ্রাহকের প্রয়োজন নাও হতে পারে। গ্রাহকদের এটি চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।'

ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কাজিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের অনেক জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান সময়মতো বিমা দাবি পরিশোধ করতে না পারায় তাদের ওপর গ্রাহকদের আস্থা কমছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ন্যাশনাল লাইফের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। তবে আইডিআরএ এই খাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নানান উদ্যোগ নিচ্ছে। এটা ভালো দিক।'

এ ছাড়াও, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় পলিসি বাতিল হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ২০২৩-২৪ সালে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ৭৩ শতাংশ।

আইডিআরএ'র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে— একই সময়ে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, যমুনা লাইফ ইনসিওরেন্স ও বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সবচেয়ে কম সংখ্যক পলিসি বাতিল হয়েছে।

আইডিআরএ'র মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বেশি পলিসি বাতিল হয়েছে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।'

এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে পরিকল্পনা চাওয়ার পর পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আইডিআরএ'র তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ১৫ লাখ ৪২ হাজার গ্রাহক দেখেছেন তাদের পলিসি বাতিল হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনসিওরেন্স একাডেমির পরিচালক এস এম ইব্রাহিম হোসেন সম্প্রতি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পলিসি বাতিল হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে এজেন্টের মধ্যে গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য না দেওয়ার প্রবণতা।'

'এজেন্টরা অনেক সময় পলিসি বিক্রির সময় সব নিয়ম গ্রাহকদের জানান না। অনেক এজেন্ট এমন পলিসি বিক্রি করে থাকতে পারে যা গ্রাহকের প্রয়োজন নাও হতে পারে। গ্রাহকদের এটি চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।'

তিনি জানান, পলিসি বন্ধের অন্যান্য কারণও আছে। যেমন, অনেক এজেন্টের অর্থ আত্মসাতে জড়িত থাকা, প্রিমিয়াম পরিশোধ না করা ও গ্রাহকের আয় কমে যাওয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিসি বাতিল হওয়া গ্রাহক ও বিমা প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই খারাপ।

গ্রাহকদের জন্য খারাপ, কারণ তারা পলিসি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর প্রতিষ্ঠানের জন্য খারাপ, কারণ এটি রাজস্ব কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক স্থিতিশীলতা ও গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে।

Comments

The Daily Star  | English

Growth of economic units slows amid capital shortages

The growth in the number of economic units in Bangladesh has slowed over the past decade, primarily due to capital shortages among rural entrepreneurs, according to the latest Economic Census of the Bangladesh Bureau of Statistics.

3h ago