দীর্ঘমেয়াদি ঋণের দিকে নজর বাংলাদেশের

খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সরকার দেশীয় খাত থেকে নির্দিষ্ট হারে ও দীর্ঘ মেয়াদে আরও বেশি ঋণ নিতে চায়। একইসঙ্গে ট্রেজারি বিলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়। ঋণের ঝুঁকি কম রাখতে ও বিনিময় হারের অস্থিরতা এড়াতে এই লক্ষ্যমাত্রা নিচ্ছে সরকার।

সরকারের এক নথিতে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান ঋণের কারণে বাংলাদেশের ঝুঁকি এখনো মাঝারি হলেও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতার কারণে বিনিময় হারের ঝুঁকি বেড়েছে। ফলে, সরকার ঋণ নেওয়ার কৌশল পুনর্বিবেচনা করেছে।

সরকারের মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল অনুযায়ী, বিদ্যমান ঋণ পোর্টফোলিও থেকে উদ্ভূত ঝুঁকি মাঝারি, কারণ বেশিরভাগ ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় মূল্যায়িত হয় এবং বিদেশি ঋণের মেয়াদ দীর্ঘ হয়।

তবে বিদেশি ঋণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ বেশি ব্যয়বহুল বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে বিদেশি ঋণের গড় ব্যয় ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ ঋণের ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০০৬-০৭ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের ঋণ পোর্টফোলিওর তথ্যে সরকারের মোট ঋণের গঠনগত পরিবর্তন এবং এর প্রভাবের কারণগুলো উঠে এসেছে।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শতকরা হিসাবে মোট ঋণ ২০০৭ অর্থবছরের ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ২০১৭ অর্থবছরে ২৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। তারপর থেকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত আছে এবং ২০২৩ অর্থবছরে ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৫৬ শতাংশ এবং বাকিটা বিদেশি ঋণ বলে অনুমান করা হচ্ছে।

অবশ্য অভ্যন্তরীণ ঋণের মেয়াদপূর্তির গড় সময় কম এবং এক বছরের মধ্যে ম্যাচিউর হওয়া ঋণের জন্য ব্যয় বেশি হয়। এজন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের মেয়াদ আরও বাড়ানোর দরকার বলে মনে করছে সরকার।

গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে বেড়েছে এবং সরকার এই ধারা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছে।

এ লক্ষ্য অর্জনে সহজ ও ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগের গতি বাড়াতে হবে। যেহেতু দেশের রাজস্ব প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়, তাই বিশ্বজুড়ে প্রচলিত রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘাটতি অর্থায়নের আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ।

নথিতে বলা হয়েছে, বহিস্থ ও অভ্যন্তরীণ উৎসের মাধ্যমে এই প্রয়োজনীয় অর্থায়নে সবসময় প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়।

এতে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাণিজ্যিক পরিস্থিতির অবনতি হয়, ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মারাত্মক চাপে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালের আগস্টের ৪১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কম।

নথিতে বলা হয়েছে, 'প্রবৃদ্ধিবান্ধব বিনিয়োগে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা ও ঋণের স্থায়িত্ব ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দিয়ে রাজস্ব খাতে সংস্কার অব্যাহত রাখা এখন জরুরি।'

এজন্য সরকার চারটি বিকল্প অর্থায়ন কৌশল চিহ্নিত করেছে। এই কৌশলগুলো ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হচ্ছে।

এতে বলা হয়েছে, এর মধ্যে নতুন ঋণের খরচ ও ঝুঁকি বিবেচনায় তিন নম্বর কৌশল সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়, কারণ এটাতে দেশীয় বাজার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরকার বিদেশি ঋণ ২০২৫ অর্থবছরে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০২৭ অর্থবছরে মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ঋণ ২০২৫ অর্থবছরের ৭৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২৭ অর্থবছরে ৮৩ দশমিক ৩ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়েছে।

মোট অর্থায়নে ট্রেজারি বন্ডের অংশ নতুন অর্থবছরের ২১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২৭ অর্থবছরে ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ করতে হবে। এই সময়ে ট্রেজারি বিলের অংশ ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে।

তবে, আর্থিক বাজারে তারল্য পরিস্থিতি কঠিন থাকায় এই কৌশল বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে, যা নিয়ে সরকার সচেতন।

নথিতে বলা হয়, 'চাপ কমাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ বাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পথে হাঁটবে সরকার।'

কৌশল অনুযায়ী, সরকার কোনো আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা করছে না।

'সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইতোমধ্যে যেসব সংস্কার হয়েছে তা অব্যাহত রাখা এবং যখন সম্ভব অন্য পরিকল্পনা করা ও বাস্তবায়ন করা।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

12h ago