‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিল পেনশন কর্তৃপক্ষ

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ
সর্বজনীন পেনশন
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গতকাল ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের 'প্রত্যয়' স্কিম চালু হয়েছে। তবে এই স্কিম নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে প্রত্যয় স্কিম নিয়ে কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনতে অন্যান্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানের জন্য 'প্রত্যয়' স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে যেসব বিষয় স্পষ্ট করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ

১. এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব শিক্ষক/কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন, তারা আগের মতো সব পেনশন সুবিধা পাবেন।

২. বর্তমানে সরকারি পেনশনে আনফান্ডেট ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ফলে, পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। তবে ১ জুলাই থেকে ফান্ডেড ডিফাইন্ড কনট্রিবিউটরি সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে, তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর পাওয়া মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা যা কম হয় তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কাটবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। তারপর উভয় অর্থ ওই কর্মকর্তা/কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

৩. আনফান্ডেট ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় যা দীর্ঘমেয়াদে কোনক্রমেই টেকসই ব্যবস্থা নয়। অন্যদিকে ফান্ডেড কনট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন ও বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে। তাই এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থা। উল্লেখ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটর পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে।

৪. নতুন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সব টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে। এতে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ইনক্লুসিভ ডেভলপমেন্ট নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

৫. কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোনো পদে নিয়োগ পেলে তিনি সার্ভিস প্রটেকশন ও পে প্রটেকশন প্রাপ্ত হন, তাই এটিকে নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। সেক্ষেত্রে তার বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী, যারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই ও তার পরবর্তী সময়ে নতুন নিয়োগ পাবেন কেবলমাত্র তারা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

৬. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন। তাই ৬৫ বছর থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।

৭. লাম্পগ্রান্ট ও পিআরএল অর্জিত ছুটি প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়, তাই ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে তা বহাল থাকবে।

৮. কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এককালীন নয় বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করাই অগ্রগণ্য, তাই এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের কয়েকগুণ বেশি মাসিক পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতন থেকে কাটা হলেও একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা দিলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তার মোট প্রাপ্তি হবে ২ কোটি ২৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা, যা তার জমার প্রায় ১২ দশমিক ৫ গুণ। পেনশনার পেনশনে যাওয়ার পর ৩০ বছর জীবিত থাকলে তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।

৯. বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনার আজীবন পেনশন পান। তার অবর্তমানে পেশনারের স্পাউজ ও প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন। পেনশনারের অবর্তমানে তার স্পাউজ বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসাবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন পাবেন। যেমন- একজন পেনশনার অবসরে যাওয়ার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় পাঁচ বছর পেনশন পেয়ে তারপর মারা গেলেন। এক্ষেত্রে তার স্পাউজ বা নমিনি আরও ১০ বছর পেনশন পাবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটার প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না।

এছাড়া সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতা বহির্ভূত থাকায় সরকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তুলতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবর্তন করেছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ এর ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, দেশের সকল মানুষের জন্য পেনশন স্কিম প্রবর্তনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।

পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ২০২৪ সালের ১ জুলাই বা তার পরবর্তীতে যোগ দেওয়া সকল কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ২০২৫ সালের ১ জুলাই ২০২৫ বা তার পরবর্তীতে যোগ দেওয়া সরকারি কর্মচারীরাও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসবেন।

Comments