বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে কী থাকছে বাজেটে?

ব্যবসায়ীদের মতে, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ব্যাংক সুদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিডা, ঋণপত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক,
ছবি: সংগৃহীত

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা উচ্চাভিলাষী ও অর্জন করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। এজন্য কারণ হিসেবে তারা ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ও মার্কিন ডলারের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামী অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যা চলতি বছরের আনুমানিক ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় বছরের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের গড় ছিল ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।

ব্যবসায়ীদের মতে, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ।

এই প্রেক্ষাপটে বড় বিনিয়োগ করা মানে বিরাট ঝুঁকি বলে মনে করছেন তারা।

গত মাসে ব্যাংকিং খাতে বাজারভিত্তিক সুদের হার চালু করেছে বাংলাদেশ এবং সুদের হার ইতোমধ্যে ১৪ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ২০ জুন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। এদিকে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে এখনো উচ্চ পর্যায়ে আছে, এ বছরের মে মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে পৌঁছেছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার ও মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ের উচ্চ ব্যয়সহ ব্যবসায়ীরা এখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'ফলে বিনিয়োগ নিয়ে আসা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান বাস্তবতায় নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবর্তে ব্যবসা পরিচালনার উপায় খুঁজে বের করা প্রয়োজন।'

এসব বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের জন্য বড় বিনিয়োগ আনা বেশ কঠিন বলে মনে করেন তিনি।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ মুহূর্তে শ্রমঘন শিল্পের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই, তাই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আনার ওপর জোর দেওয়া উচিত।

তার ভাষ্য, 'এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ বেসরকারি বিনিয়োগকে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের পরিকল্পনাকে সহজতর করবে।'

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিধিবিধান সহজতর করা, প্রণোদনা প্রদান, এফডিআই প্রচার ও শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগে মনোযোগ দিতে পারে

'পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে হবে।'

আসিফ ইব্রাহিম বলেন, 'এই প্রচেষ্টা বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।

তিনি মন্তব্য করেন, ব্যবসা সহজ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

২০২৫ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশে উন্নীত করতে এসব বাধা অতিক্রম করতে হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, অথচ সর্বশেষ মুদ্রানীতির বিবৃতি সংকোচনমূলক প্রকৃতির, যা বিনিয়োগের জন্য প্রতিবন্ধক।

বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি, সরকারি বিনিয়োগ, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও এফডিআই কম থাকায় আগামীতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, '২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পর আমাদের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন না হলে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে।'

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালার সমন্বয় ও ব্যবসাবান্ধব না হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

Comments