এক দশকে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিকল্পনার মাত্র ১০ শতাংশ বাস্তবায়ন

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বেজা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইজেড, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর, ছবিটি ২০২২ সালে তোলা। ফাইল ফটো

২০১৫ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ব্যাপক শিল্পায়ন পরিকল্পনা নেওয়ার পর মাত্র দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) চালু হয়েছে। তাই ১০০টি অর্থনৈতিকত অঞ্চল গড়ে তোলার যে লক্ষ্যমাত্রা বেজার রয়েছে, সময়মতো শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, গত এক দশকে মোট ৯৭টি ইজেডের অনুমোদন দিয়েছে বেজা বোর্ড। এর মধ্যে ৬৮টি গড়ে তুলবে সরকার এবং ২৯টি গড়ে তুলবে বেসরকারি খাত। এগুলো গড়ে তোলার প্রাথমিক সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০৩০ সাল।

তবে, সেই সময়সীমা পরে ২০৪১ সালে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কারণ এত বেশি সংখ্যক প্রকল্প সম্পাদন করতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। এখানে বেশি সময় লাগা খুব সাধারণ বিষয়, কারণ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ।

প্রসঙ্গত, দেশের দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে দুটি সরকার পরিচালনা করে, যথাক্রমে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন), সিলেটের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। বাকি আটটি বেসরকারি খাত পরিচালনা করে

বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলো- সিটি ইকোনমিক জোন, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন, মেঘনা ইকোনমিক জোন, হোসেন্দি ইকোনমিক জোন, আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোন, বে ইকোনমিক জোন, আমান ইকোনমিক জোন এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইকোনমিক জোন।

বেজার নথি অনুযায়ী, সরকার পরিচালিত দুই ইকোনোমিক জোনে ইতোমধ্যে ১৩টি প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করছে। এর মধ্যে বিএসএমএসএনে ১১টি কারখানা এবং শ্রীহট্টায় দুটি কারখান স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩৬টি কারখানার অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে বিএসএমএসএনে ২৫টি, শ্রীহট্টায় চারটি, জামালপুরে পাঁচটি এবং দুইটি জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

বেজা এ পর্যন্ত ২৯টি বেসরকারি ইজেডকে অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে ১২টি চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়েছে এবং দশটিকে প্রি-কোয়ালিফিকেশন সনদ দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সনদ পাওয়াদের মধ্যে আটটি চালু হয়েছে।

অন্যদিকে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ১৭টি কারখানা নির্মাণাধীন।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন মনে করেন না, অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়েছে।

তিনি বলেন, 'দশটি জোন ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে এবং আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২৯টিতে।'

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগে বলে ২০৩০ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে ১০০টি ইজেড স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করেছে বেজা।

'২০৩০ সালের মধ্যে আমরা অন্তত ৩৮টি ইজেড চালু করতে পারব।'

শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, তারা উৎপাদন ও সেবা খাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

প্রকৌশল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেডের অর্থনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন অনেক সরকারি অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পে সম্ভাব্যতা পরামর্শ সেবা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, বেজা দেশব্যাপী ইজেডের উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে, তাই কারখানা স্থাপন এবং বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের জন্য সেগুলো চালু করার সময় এসেছে।

তিনি মনে করেন, 'বেজার স্থায়িত্বের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গত দশকে বেজা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য পণ্য উত্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে।'

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বিনিয়োগকারীদের প্লট দেওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের উচিত আগে স্থাপনাগুলোর উন্নয়ন করা।

'অন্যথায় বিনিয়োগকারীরা সেখানে গেলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।'

উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছেন, যেসব জোনে বিনিয়োগকারীরা প্লট পেয়েছেন তারা এখনো ইউটিলিটি সংযোগ পাননি এবং নিজেরাই পানি সরবরাহ নিশ্চিত করছেন।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাবেক প্রধান প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট সৈয়দ আখতার মাহমুদ ইজেডের ধারণাকে প্রশংসা করে বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে জমির ঘাটতি আছে, তাই সুপরিকল্পিত শিল্পায়নের দিকে নজর দিচ্ছে।

তিনি পরামর্শ দেন, 'ইজেডে সেইসব বিনিয়োগকারীদের প্লট দিতে হবে যাদের কারখানা স্থাপনের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য আছে। আর তা না হলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনের সময় জমি পাবেন না।'

তিনি বলেন, বেজার উচিত পর্যায়ক্রমে ইজেড বাস্তবায়ন করা। যদি সবগুলো ইজেড একযোগে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে কোনোটিই সঠিকভাবে কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ এগুলো বাস্তবায়নের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থ জড়িত।

বেজা দেশ-বিদেশের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২৮ দশমকি ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে। ২০২০ সাল থেকে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার।

সংস্থাটির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলমান জোনগুলোতে প্রায় ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন জোনে সাত হাজার এবং বেসরকারি জোনে ৫৩ হাজার কর্মী কাজ করছেন।

এতে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষে দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৪ শমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য উৎপাদিত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

1h ago