কুড়িগ্রামে ‘ভুটান অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

ভুটান অর্থনৈতিক অঞ্চল
কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলায় ধরলা নদীর পাশে মাধবরাম গ্রামে প্রস্তাবিত ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

উত্তরের সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলায় ধরলা নদীর পাশে মাধবরাম গ্রামে গড়ে উঠতে যাচ্ছে 'ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল'।

সম্ভব্যতা যাচাই করতে গত রোববার ও সোমবার নির্ধারিত স্থানসহ যোগাযোগ সংযোগের জায়গাগুলো পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল। তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।

বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি-ভিত্তিক প্রস্তাবিত 'ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে জেনে কুড়িগ্রামবাসী খুশি।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন শেষে ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল সাংবাদিকদের বলেন, 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান দেখে আমি মুগ্ধ। স্থানটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উপযুক্ত। এখানে ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে ভুটান ও বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবেন। কুড়িগ্রামের মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।'

'খুব দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এ ব্যাপারে ভুটান ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে সব প্রস্তুতি নিয়েছে।'

জেলা প্রশাসন সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম গ্রামে ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। প্রয়োজনে ওখানে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ আছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বেজার কাছে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এখানে আরও ৮০ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা আছে।'

ভুটান অর্থনৈতিক অঞ্চল
ভুটান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিল। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসফিকুল আলম হালিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুড়িগ্রাম জেলার বড় অংশ চরাঞ্চল। এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কলকারখানা প্রয়োজন। এখান থেকে যেহেতু ভুটান অনেক কাছে সেহেতু ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠার পর এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত হবে।'

কুড়িগ্রাম প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুড়িগ্রামের সোনাহাট ও রৌমারী স্থলবন্দর এবং চিলমারী নৌ-বন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগ সুবিধা আছে। কুড়িগ্রামের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের কানেক্টিভিটি খুবই ভালো। কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।'

বেজা সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকার দূরত্ব কম। সহজে যাতায়াত করা যায়। ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে নতুন নতুন ব্যবসা-বা‌ণি‌জ্যের সুযোগ হবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে।'

২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ধারাবাহিকতায় ভুটানের রাষ্ট্রদূত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌ বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো।

স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা ঠিক করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে জেনে স্থানীয়রা আনন্দিত। এতে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। কুড়িগ্রামে দারিদ্র্য কমবে।

Comments

The Daily Star  | English

Hasnat warns media against airing Hasina’s speech

He further warned that there would be no rehabilitation of Hasina or fascism in Bangladesh

28m ago