২০২৩ সালে বিমা দাবি নিষ্পত্তি বেড়েছে, তবে বৈশ্বিক গড়ের অনেক নিচে

বাংলাদেশে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিমা খাতে দাবি নিষ্পত্তির হার চার শতাংশের বেশি বেড়েছে। কিন্তু, সেই হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক কম।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দাবি নিষ্পত্তির হার ছিল ৬৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এক বছর আগে যা ছিল ৬১ দশমিক ১৬ শতাংশ।

আইডিআরএ'র তথ্যে দেখা গেছে, লাইফ ও নন-লাইফ উভয় বিমার ক্ষেত্রেই নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। লাইফ ইনস্যুরেন্স খাতে ২০২৩ সালে ৭২ শতাংশ দাবি নিষ্পত্তি হয়েছে, আগের বছর যা ছিল ৬৭ শতাংশ।

এ ছাড়া নন-লাইফ বিমার ক্ষেত্রে আগের বছরের ৩৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৪১ শতাংশ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিমা দাবি নিষ্পত্তির বৈশ্বিক গড় ৯৭-৯৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই হার দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ৪৫ শতাংশে।

২০২৩ সালে বিমা গ্রাহকরা ১৫ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার দাবি করেছেন। এর বিপরীতে বিমা কোম্পানিগুলোর নিষ্পত্তি করেছে ১০ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু বিমা কোম্পানি সময়মতো দাবির একটি বড় অংশ পরিশোধ না করায় দেশে দাবি নিষ্পত্তির হার বৈশ্বিক তুলনায় কম।'

'এই কারণেই বিমা শিল্প নিয়ে দেশের মানুষদের বড় একটা অংশের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে,' বলেন তিনি।

বারী জানান, দাবি নিষ্পত্তির হার বাড়াতে আইডিআরএ কিছু বিধির সংস্কার শুরু করেছে। এছাড়া, এই খাতের সুশাসন ও বিমা গ্রাহকদের নিরাপত্তার জন্য গাইডলাইন চালু করেছে।

তিনি আরও জানান, একটি কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে এবং দুটি কোম্পানি বিশেষ নিরীক্ষার অধীনে আছে। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।

বারী আরও বলেন, অন্যান্য কোম্পানি যেন বীমা দাবির নিষ্পত্তির হার বাড়ায় সেজন্য এসব করা হয়েছে।

এ ছাড়া কিছু কোম্পানিকেও সম্পত্তি বিক্রি ও দাবি নিষ্পত্তির নির্দেশও দিয়েছে আইডিআরএ, জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'তবে কেবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার একার পক্ষে এ খাতের উন্নয়নে সবকিছু করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কোম্পানিগুলোর সদিচ্ছা থাকতে হবে।

বারী আরও বলেন, জনগণের সেবা দেওয়া ও সততার সঙ্গে ব্যবসা করার মানসিকতা না থাকলে যতই আইন তৈরি করা হোক না কেন, এ খাতে সমস্যা থেকে যাবে।

এ দিকে গত ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স চালু করে ব্যাংকগুলোকে বিমা পণ্য বিক্রির অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিমা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকাসুরেন্স বিমা খাতের সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে পারবে। কারণ বিমা কোম্পানির চেয়ে ব্যাংকগুলো বেশি পেশাদার, তাই বিমা পণ্যের প্রতি হয়তো মানুষের আস্থা বাড়াবে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ, ভারতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৫টি জীবন বিমা ও ৪৬টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি আছে।

দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত বিমা খাতকে ব্যাংকের মতো অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। তাই এটি সুসংগঠিত হতে সময় লাগছে।

গত ১৪ বছরে আগে বিমা খাত নিয়ন্ত্রণে আইডিআরএ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামনে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। মানুষের আস্থা বাড়বে।'

কবির জানান, দেশে কিছু দুর্বল জীবন বিমা কোম্পানি আছে, যেগুলোর দাবি নিষ্পত্তির হার ১০ শতাংশের কম। এই কোম্পানিগুলো এই খাতের সামগ্রিক দাবি নিষ্পত্তির হারকে ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

তাই তিনি আইডিআরএকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি আইডিআরএর কর্মকর্তাদের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে, বলেন তিনি।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মানুষ বিমা সুবিধার আওতায় আছে।

Comments

The Daily Star  | English
RMG worker killed in Gazipur

15 beaten up while vandalising ex-minister's house in Gazipur

Fifteen people were injured in Gazipur yesterday as locals confronted a group of protesters who tried to vandalise the ancestral home of former Liberation War Affairs Minister AKM Mozammel Haque

4h ago