‘তৈরি পোশাক থেকে আয় আরও ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার বাড়তে পারে’
আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকার অনলাইন বাজারে তৈরি পোশাক বিক্রি করে বাংলাদেশের বাড়তি ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার আয়ের সম্ভাবনা আছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।
সেই দিন বিজিএমইএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইএফসি, বিজিএমইএ ও লাইটক্যাসলের যৌথভাবে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়—তবে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করতে হবে।
'ইস্টাবলিশিং এ ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেস ফর বাংলাদেশি অ্যাপারেলস' শীর্ষক গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকার অনলাইন পোশাকের বাজার দাঁড়াবে ৩০৮ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসলের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এ গবেষণা পরিচালনা করেছে।
গবেষণা অনুসারে, ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন পোশাক বাজারের শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ ও আফ্রিকায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ পেতে পারে বাংলাদেশ।
লাইটক্যাসলের জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য পরামর্শক ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক দীপা সুলতানা বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে মোট পোশাক বিক্রির এক-তৃতীয়াংশ অনলাইন চ্যানেলে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া সময় ও ব্যবসার খরচ কমবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া সহজতর হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'মধ্যস্বত্বভোগীর সংখ্যাও কমবে। এটি শেষ পর্যন্ত ব্যবসাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।'
সেখানে আন্তর্জাতিক গুদামও থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, 'দেশি পোশাক সরবরাহকারীরা অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে পাইকার, খুচরা বিক্রেতা, ব্র্যান্ড এমনকি ক্রেতাদের কাছে সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এটি ব্যবসায়ীদের ভালো দাম পেতে সহায়তা করবে।'
বর্তমানে অ্যামাজন ও আলিবাবার অনলাইন মার্কেটপ্লেস আছে এবং বাংলাদেশ থেকে তাদের গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহ করে।
বিজিএমইএ সভাপতি এ ধরনের অনলাইন মার্কেটপ্লেস স্থাপনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সক্ষম করতে সরকারের নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সহায়তা কামনা করেন, যাতে দেশ বৈশ্বিক ব্যবসার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জন করতে পারে।
তিনি মনে করেন, 'কারণ শুধু পোশাক ব্যবসা নয়, অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনলাইন বিজনেস প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।'
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লন্ডনের কোনো ক্রেতা বাংলাদেশি পোশাক প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে পোশাক কিনতে চাইলে স্থানীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান শুল্ক, বন্দর ও ব্যাংকের বর্তমান নীতিমালার কারণে তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারেন না।
তাই সরকারের শুল্ক, বন্দর ও ব্যাংকিং বিধিমালা সহজ করা প্রয়োজন, যাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনলাইন মার্কেটপ্লেস তৈরি করে আরও বেশি ব্যবসা করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি জানান, অনলাইন মার্কেটপ্লেস আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে, তবে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য তা এখনো উন্মুক্ত হয়নি।
তিনি বলেন, 'লোহিত সাগরে চলমান অচলাবস্থার কারণে স্থানীয় সরবরাহকারীরা ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের অন্যান্য দেশে পণ্য পরিবহণে অসুবিধায় পড়ছেন।'
তিনি জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ফ্রেইট অন বোর্ড (এফওবি) পদ্ধতিতে পণ্য সরবরাহ করায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্রেতারা পণ্যের খরচ বহন করছেন।
তবে কেউ কেউ কস্ট অ্যান্ড ফ্রেইট (সি অ্যান্ড এফ) পদ্ধতিতে পণ্য পাঠান। এর মাধ্যমে স্থানীয় সরবরাহকারীরা পণ্য পরিবহন করেন। এটি তাদের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
তিনি আশাবাদী যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
Comments