রুবলে বাণিজ্য করলে বাংলাদেশের কী লাভ?

রুবল, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল, রাশিয়া, লেনদেন,
রয়টার্স ফাইল ফটো

বাংলাদেশকে 'বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিরপেক্ষ' দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে রাশিয়া। ফলে, বাংলাদেশের ব্যাংক ও ব্রোকাররা রাশিয়ার সঙ্গে রুবলে বাণিজ্যিক লেনদেন করতে পারবে।

রাশিয়ার এই উদ্যোগ উভয় দেশের জন্য উত্সাহব্যাঞ্জক। কারণ, দুই দেশই মার্কিন ডলারের ওপর থেকে অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে চাইছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে রাশিয়া ধীরে ধীরে ডলারের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়েছে। শুধু তাই নয় পশ্চিমা আর্থিক ব্যবস্থা থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা করছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে এই তৎপরতা আরও বেড়েছে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে- রাশিয়ার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত জব্দ করা এবং হাজার হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে রাশিয়ার প্রধান ব্যাংকগুলোকে সরিয়ে দেওয়া।

এদিকে বাংলাদেশও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় মার্কিন ডলার ছাড়াও অন্যান্য মুদ্রায় আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু করেছে।

তবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও ব্যাংকারদের মতে, রুপিতে সম্ভব হলেও বর্তমানে রুবলের ক্ষেত্রে সম্ভব নাও হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো এখন থেকে দুইভাবে রুবলে বাণিজ্য করতে পারবে। একটি উপায় হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুবলকে একটি রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা ঘোষণা করতে পারে। আরেকটি হলো- স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে ওয়ান-টু-ওয়ান ভিত্তিতে রুশ মুদ্রায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করতে হবে।

বর্তমানে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আটটি মুদ্রায় বিদেশি বাণিজ্য করার অনুমতি দেওয়া হয়, যথাক্রমে- মার্কিন ডলার, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, ইউরো, পাউন্ড, সুইস ফ্রাঁ ও চীনা ইউয়ান।

ওয়ান-টু-ওয়ান ভিত্তিতে বাণিজ্যের জন্য একটি বা দুটি স্থানীয় ব্যাংক নির্বাচন করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাশিয়াকেও তাদের একটি বা দুটি ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। তারপর নির্বাচিত ব্যাংকগুলো ‍রুবলে বাণিজ্য করতে পারবে।

গত ১১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ওয়ান-টু-ওয়ান ভিত্তিতে রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়।

রাশিয়ার ওপর যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুদ্ধ শুরুর পরপরই বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে সাতটি রুশ ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন স্থগিত করতে বলেছিল সুইফট। কারণ, এগুলো যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছিল।

এ কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সরাসরি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাশিয়ান এই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারেনি।

এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকেও প্রভাবিত করেছে।

যুদ্ধের আগে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৬৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার রপ্তানি ৬৩৮ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে গত অর্থবছরে ৪৬০.৩৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'রাশিয়াতে আমাদের কিছু রপ্তানি আছে এবং আমদানি খুবই কম। তাই এটির সম্ভাবনা কম।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ায় রপ্তানির বেশিরভাগই তৃতীয় দেশগুলোর মাধ্যমে হচ্ছে, তাই রপ্তানি আয় হিসেবে বাংলাদেশ রুবল পাচ্ছে না।

ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ মার্কিন ডলারের মাধ্যমে এবং বাকি অংশ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে হয়।

বর্তমানে অন্যান্য মুদ্রার ব্যবহার বাড়লেও তা খুব বেশি নয় বলে জানান তারা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিসি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলছেন, বাংলাদেশ যদি রুবলে বাণিজ্য করে, তাহলে দেশের রিজার্ভ আরও কমে যাবে। কারণ বাংলাদেশ তখন ডলার হারাবে।

তিনি মনে করেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য রুবল একটি অন্তর্বর্তীকালীন বিকল্প হতে পারে।

তিনি বলেন, 'রাশিয়া আমাদের ব্যাংকগুলোকে রুবলে বাণিজ্য করার অনুমতি দিয়েছে, কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা মার্কিন ডলারে বাণিজ্য করতে পারছে না।'

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইড মনুরও একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'রুবলে বাণিজ্যের কোনও বাস্তব বাস্তবায়ন নেই। রাশিয়া নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করার চেষ্টা করছে, কারণ তারা মার্কিন ডলারে বাণিজ্য করতে পারছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ রুবল থেকে কিছু রপ্তানি আয় পাবে এবং রপ্তানিকারকরা তা আমদানিতে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু, রুবলে বাণিজ্যের পরিসর বাড়বে না।'

তবে কিছু দেশ অবশ্য রুবলে বাণিজ্য করছে বলে জানান তিনি।

এসসিও (সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশন) দেশগুলোর সার্বিক রপ্তানি লেনদেনের ৪০ শতাংশে রুবলে হয়েছিল। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এসসিও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আছে- চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং ইরান।

গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে গ্লোবাল টাইমস অব চায়না জুনে জানিয়েছিল, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি বাণিজ্য এখন রুবল ও ইউয়ানে হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Interest payments, subsidies soak up almost half of budget

Interest payments and subsidies have absorbed nearly half of Bangladesh’s total budget expenditure in the first seven months of the current fiscal year, underscoring growing fiscal stress and raising concerns over public finances.

3h ago