কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ্বিতীয় গাড়িতে সারচার্জের পরিকল্পনা

স্টার ফাইল ফটো

কার্বন নিঃসরণ ও বায়ুদূষণ কমাতে সরকার যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার পরিকল্পনা নেওয়ায় আগামী অর্থবছর থেকে একাধিক গাড়ির মালিকেরা কার্বন ট্যাক্সের মুখোমুখি হতে পারেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ এবং মাইক্রোবাসের মালিকদের তাদের ইঞ্জিনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে পরিবেশ সারচার্জ দিতে হতে পারে। তবে, বাস বা অন্য গাড়ি এর আওতায় আসবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'দূষণ রোধে ব্যক্তিগত গাড়ির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে আমরা কার্বন ট্যাক্স আরোপের কথা বিবেচনা করছি। এই কর অন্যান্য দেশেও আছে।'

আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সারচার্জের প্রস্তাব করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠান, সংস্থাসহ সব গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে এই সারচার্জ আদায় করার পরিকল্পনা করছি। যদি কোনো সংস্থার একাধিক গাড়ি থাকে, তবে তা কার্বন ট্যাক্সের আওতায় আসার সম্ভাবনা আছে।

তিনি জানান, অন্যান্য দেশেও শিল্প কারখানার ওপর কার্বন ট্যাক্স আছে। তবে বাংলাদেশ আগামী অর্থবছর থেকে জিপ ও গাড়িতে ট্যাক্স আরোপের মাধ্যমে এটি শুরু করতে পারে।

এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে আসছে যখন সড়কে, বিশেষ করে রাজধানীতে ক্রমাগত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, যা যানজটের পাশাপাশি বায়ুদূষণের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে তুলছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যে, বাংলাদেশে ৫৭ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে যার মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ এবং মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬ লাখের বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, মেট্রোরেলের আংশিক কার্যক্রম ইতোমধ্যে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি করেছে এবং পুরোদমে চালু হলে তা আরও বাড়বে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে, ১৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির মালিকদের প্রথম গাড়ির পরে প্রতিটি গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা সারচার্জ দিতে হতে পারে। টাকার এই পরিমাণ অগ্রিম করের সমান, যা একজন গাড়ির মালিককে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দিতে হয়।

১৫০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ও পরবর্তী যানবাহনের ক্ষেত্রে সারচার্জ দ্বিগুণ করে ৫০ হাজার টাকা করা হবে।

২০০১ থেকে ২৫০০ সিসি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি দ্বিতীয় গাড়ি, জিপ বা মাইক্রোবাসের উপর ৭৫ হাজার টাকা পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ হিসেবে বিবেচনা করে কর কর্তৃপক্ষ। যা গাড়ির ফিটনেস পুনর্নবীকরণের সময় গাড়ির মালিককে যে উইথহোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয় তার সমান।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৫০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির মালিকদের জন্য অর্থের এই পরিমাণ বাড়ানো হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ৩০০০ সিসির বেশি দ্বিতীয় বা তৃতীয় গাড়ির মালিক কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা সংস্থাকে কার্বন কর হিসেবে ২ লাখ টাকা দিতে হতে পারে, যা এই ধরনের যানবাহনে আরোপিত অগ্রিম কর থেকে ৩৩ শতাংশ বেশি।

৩৫০০ সিসি বা তার বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় গাড়ি বা জিপের ক্ষেত্রে সারচার্জের পরিমাণ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা হতে পারে, যা গাড়ির উইথহোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ৭৫ শতাংশ বেশি।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর কর্তৃপক্ষ যানবাহন নিবন্ধন বা ফিটনেস পুনর্নবীকরণের সময় সারচার্জ দিতে হবে এমন নিয়ম আরোপ করতে পারে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার সরকারের কার্বন ট্যাক্স পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে ৫৭ লাখেরও বেশি যানবাহন রয়েছে এবং এর এক-তৃতীয়াংশই ঢাকায়। বহনক্ষমতা না থাকলেও প্রতিদিনই নতুন নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। এটি বন্ধ করা এবং পরিবেশ রক্ষা করা প্রয়োজন।'

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির চেয়ে গণপরিবহন, বিশেষ করে বাস পরিবেশকে বেশি দূষিত করছে। তবে ধনী করদাতাদের কাছ থেকে সারচার্জ আদায় করা একটি ভালো উদ্যোগ।

যে সারচার্জ সংগ্রহ করা হবে তা কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

UK govt unveils 'tighter' immigration plans

People will have to live in the UK for 10 years before qualifying for settlement and citizenship

1h ago