সহজ শর্তে সুযোগ দেওয়া হলেও দেশে ফেরেনি পাচারকৃত অর্থ

পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার প্রথমবারের মতো সহজ শর্তে সুযোগ দিলেও তাতে কোনো ফলাফল দৃশ্যমান হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে কেউই সুবিধাটি নেয়নি।

অতীতের সরকারগুলো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। গত জুনে বর্তমান সরকার বিদেশে পাচার করা অর্থকে বৈধ করার সুযোগ দেয়। মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়া হয়।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে যখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে পড়েছে, তখন সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী, কর দেওয়া হলে বাংলাদেশের বাইরে থেকে আসা এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগসহ কোনো কর্তৃপক্ষই কোনো প্রশ্ন তুলবে না।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, কেউ সুযোগ গ্রহণ না করলে সরকারের কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, 'আমরা এই প্রস্তাবকে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট তৈরি করিনি। আমরা বাজেটে এই সুযোগটি রেখেছি।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, পাচার হওয়া অর্থ হয়তো সেখানে আটকে গেছে, তাই পাচারকারীরা এখন বাংলাদেশে এসব অর্থ বৈধ করার চেষ্টা করছে।

'যদি অর্থ পাচারকারীরা তাদের অর্থ বিদেশে বৈধ করতে না পারেন, তাহলে তারা সরকারের সুযোগ নিতে পারে। কিন্তু তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিদেশে টাকা সাদা করার চেষ্টা করবে। কাজেই শেষ পর্যন্ত এসব অর্থ ফেরত নাও আনতে পারেন', বলেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান প্রশ্ন তোলেন, 'পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনবে কে?'

তিনি বলেন, 'এই সুযোগ দিয়ে সরকার নিজের বদনাম করেছে। এর থেকে কিছুই অর্জন করতে পারেনি।'

গত জুনে সিপিডি এই প্রস্তাবকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, অর্থনৈতিকভাবে অবাস্তব এবং রাজনৈতিকভাবে অসহযোগিতাপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে।

অধ্যাপক রহমান বলেন, 'এটা এখন প্রমাণিত যে এই উদ্যোগ অর্থনৈতিকভাবে অবাস্তব।'

তিনি বলেন, হুন্ডির মতো অবৈধ উপায়ে টাকা পাচার হয়েছে। তাই যতই সুযোগ দেওয়া হোক না কেন পাচারকারীরা টাকা ফেরত আনবে না।'

অধ্যাপক রহমানের মতে, এই উদ্যোগ রাজনৈতিকভাবে অসহযোগিতাপূর্ণ, কারণ সাধারণ মানুষ কখনই এই সুযোগ গ্রহণ করে না।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেন বলেন, 'সরকার কেন এমন সুযোগ দিয়েছে তা বোঝা কঠিন।'

তিনি বলেন, 'এটা যদি শুধু কর ফাঁকির কারণে হয়ে থাকে, তাহলে কর রেয়াত দিয়ে টাকা ফেরত আনার যুক্তি থাকত। কিন্তু যে টাকা দেশের বাইরে যায় সেটা দুর্নীতি বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা।'

দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকায় কর দেওয়া অর্থও বিদেশে পাঠানো হতে পারে। কিন্তু জাহিদ হুসেন মনে করেন না যে এটি অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ।

তিনি বলেন, 'অর্থ পাচারের বড় কারণ হলো অর্থ অবৈধভাবে উপার্জন করা বা দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা।'

তিনি আরও বলেন, 'অবৈধভাবে উপার্জন করা অর্থ যখন বাংলাদেশে রাখা নিরাপদ মনে করে না, তখন তারা অর্থ পাচার করে। এমন অর্থ কেউ কেন ফিরিয়ে আনবে? এটা ভাবা বোকামি যে মানুষ কর দিয়ে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনবে।'

Comments

The Daily Star  | English

3 arrested over killing of DU JCD leader near Suhrawardy Udyan

Masud Alam, deputy commissioner of Ramna Division Police, said the arrestees are outsiders

1h ago