আগামী জুন পর্যন্ত ডলার সংকট থাকতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

উন্নয়ন অংশীদারদের সহায়তার কারণে চলতি আর্থিক বছরের শেষের দিকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ওপর চাপ কমবে বলে অনুমান করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত মাসে তৈরি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শেষে পরিশোধ ঘাটতির ভারসাম্য হবে ১৫০ মিলিয়ন ডলার, যা গত জুনের শেষে ছিল ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।

ওই নথিটি পর্যালোচনা করে দ্য ডেইলি স্টার দেখেছে, মেগাপ্রকল্প ও বাজেট সহায়তা, রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি রসিদের কারণেই এ পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি ৫৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

রেমিট্যান্স প্রথমবারের মতো ২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছরে বাজেট ও নিয়মিত সহায়তা এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে রেকর্ড ১৬ বিলিয়ন ডলার আসবে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল।

ওই ৩ খাত থেকে এ পরিমাণ অর্থ আসলে জুনের শেষে ঘাটতি কমে ১৫০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।

ঘাটতি যদি ১৫০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর কোনো চাপ পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বার্ষিক সভায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'যদি অর্থনীতিতে আর কোনো বৈশ্বিক ধাক্কার না আসে, তাহলে আমি মনে করি নভেম্বর-ডিসেম্বরের পরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ থাকবে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ওপর চাপ কমেছে।'

উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেলে রিজার্ভের ওপর আর কোনো চাপ থাকবে না বলেও জানান আব্দুর রউফ তালুকদার।

যদিও এ ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'যে সমাধানের কথা বলা হচ্ছে, সেটা খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। এখানে বেশকিছু ঝুঁকি আছে।'

জাহিদ হোসেন বলেন, 'ব্যালেন্স অব পেমেন্টের জন্য পুরো অর্থবছরের জন্য যে অনুমান করা হয়েছে, অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে।'

একাধিক বিনিময় হার ব্যবস্থার কারণে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত ২ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে প্রতি মাসে ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

'এই হার চলতে থাকলে কাঙ্ক্ষিত ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছানো অসম্ভব হবে', বলেন জাহিদ হোসেন।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে প্রবাহ এক বছর আগের ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কম ছিল।

আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'চুক্তিগুলো না হলে কী হবে? সেখানেই সমস্যা। সেক্ষেত্রে আমদানি খাতের পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন হবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমান অনুযায়ী, আমদানি ৮২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে চলতি অর্থবছরে ৯১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাহিদ হোসেনের মতে, প্রস্তাবিত বিদেশি সহায়তার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষমতাও অবশ্যই সমানতালে উন্নত করতে হবে।

তবে, চলতি আর্থিক বছরে এখন পর্যন্ত বিতরণ ধীর গতিতে চলছে।

তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্যদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার পরিপূরক আইএমএফ কর্মসূচি থাকলে যে সংস্কারগুলো হতে পারে, তা বিবেচনা করেও অনুমানগুলো খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী বলে মনে হচ্ছে।'

'ব্যবসার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এটি কোনো উল্লেখযোগ্য সংস্কার নয়। পূর্ববর্তী আর্থিক বছরে ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের সামগ্রিক ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি মাত্র ১৫০ মিলিয়ন ডলারে কমিয়ে আনার আশা উচ্চাকাঙ্ক্ষী', বলেন তিনি।

যদি এসব অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে সামনে বিপদ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করে এ অর্থনীতিবিদ। তার মতে, যদি ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ে, তাহলে সেটি সামলানো কঠিন হবে। কারণ কর্তৃপক্ষের বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের কাছে সেই প্রভাব হবে অপ্রত্যাশিত।

বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাতে যত দ্রুত সম্ভব শক্তিশালী সংস্কারের আহ্বান জানান জাহিদ হোসেন। সংস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন ও সহজাত বিনিময় হারের দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং সুদের হারের সীমা কমিয়ে আনা।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

17h ago