বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উচ্চ ঘাটতি থাকবে ২০২৭ পর্যন্ত: আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রক্ষেপণ করেছে, বাংলাদেশের চলতি হিসাবে হিসাবে উচ্চ ঘাটতি থাকবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।

এই প্রক্ষেপণ ইঙ্গিত দেয় যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ খুব শিগগির দূর হচ্ছে না।

আইএমএফ প্রক্ষেপণ করছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি জিডিপির ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে, যা গত অর্থবছরে ৪ দশমিক ১ শতাংশ ছিল।

একটি দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা যায় তখনই যখন রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের তুলনায় আমদানি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আমদানির কারণে দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে।

এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে এ বছরের ৩০ জুন ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। রিজার্ভ ক্রমাগত কমতে থাকে এবং গত ১৯ অক্টোবর ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।

গত ১২ অক্টোবর প্রকাশিত আইএমএফ গ্লোবাল ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৭ সালে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ঘাটতি জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে, কেবলমাত্র ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই হার ছিল ৩ শতাংশ।

চলতি মাসের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছিল যে চলতি অর্থবছরে ঘাটতি হবে জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশের ঋণ প্রয়োজন।

জুলাইয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে ঢাকা।

বাংলাদেশে মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে আজ বুধবার ঢাকায় আসছে।

গত ২১ অক্টোবর আইএমএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দলটি ৯ নভেম্বর পর্যন্ত অবস্থানকালে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংস্কার এবং নীতি নিয়ে আলোচনা করবে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেন জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং অস্থির বাজারের কারণে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব এ বছর অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব মন্দার কারণে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত থাকতে পারে।'

তিনি উল্লেখ করেন, পেমেন্ট ব্যালেন্সে বড় ধরনের ঘাটতি থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।

জাহিদ হুসেন বলেন, 'বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের অনুমান অনুসারে, এই অর্থবছরে ঘাটতি প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার হবে। সরকার বাজেট সহায়তা হিসেবে বার্ষিক ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থা করতে পারলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে।'

তিনি জানান, সরকারের উচিত আগামী ২ থেকে ৩ বছরের জন্য একটি ব্যাপক ঘাটতি অর্থায়ন পরিকল্পনা তৈরি করা, যাতে এটি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা চাইতে পারে।

'সরকার এটি করতে পারলে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে', যোগ করেন তিনি।

সরকারের একটি উপযুক্ত বিনিময় হার নীতি থাকা উচিত জানিয়ে জাহিদ হুসেন বলেন, 'রপ্তানি, আমদানি ও রেমিট্যান্সের জন্য একাধিক হার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে পারবে না।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'প্রতি মাসেই রিজার্ভ কমছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমেছে। এই অবস্থায় সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ পেলে তা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।'

পাকিস্তানের জন্য আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সাম্প্রতিক ঘোষণা মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় হার বাড়িয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'আমাদের অবস্থা পাকিস্তানের মতো খারাপ না। কিন্তু এটাও সত্য যে আমরা খুব একটা ভালো অবস্থানেও নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

US urges China to keep Iran from shutting key trade route

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

1d ago