জীবন বীমার প্রসার এক দশকে অর্ধেকে নেমেছে

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের কর্মীরা কোনো পেনশন পান না। ফলে তাদের অকাল মৃত্যু হলে পরিবারের সদস্যরা বিপদে পড়ে যেতে পারেন। তা সত্বেও, বেসরকারি খাতের অনেক কর্মী জীবন বিমা স্কিমের ব্যাপারে আগ্রহী নন।

এমবিএ ডিগ্রিধারী আনোয়ার হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে মাসে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। হঠাৎ মারা গেলে তার চার সদস্যের পরিবার অসহায় হয়ে পড়বে জেনেও তিনি এখনও কোনো জীবন বিমা স্কিম কেনেননি।

কারণ হিসেবে তিনি বিমা খাতের ওপর কোনো ভরসা না থাকার বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান। তিনি শুনেছেন, মানুষ বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পলিসির বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই পায় না।

তিনি বাংলাদেশের কোটি কোটি শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষদের একজন, যাদের বিমার ওপর কোনো আস্থা নেই। ফলে, জীবন বিমা স্কিমের গ্রাহকের সংখ্যা খুবই কম।

দেশে ৩৫টি জীবন বিমা ও ৪৬টি সাধারণ বিমা প্রতিষ্ঠান থাকলেও গত এক দশকে অর্থনীতির তুলনায় জীবন বিমার প্রসার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

মোট প্রিমিয়াম ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতকে অর্থনীতির তুলনায় জীবন বিমার আওতা বলা হয়। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে এই অনুপাত শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ হলেও ২০২১ সালে এটি কমে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।

এর অর্থ হচ্ছে, বেশিরভাগ বাংলাদেশি মানুষ বিমার আওতায় নেই এবং বিমার প্রিমিয়ামের পরিমাণ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সঞ্চয় কম থাকায় ও আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে জ্ঞানের অভাবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বিমার আওতার বাইরে থেকে যায়।

বাংলাদেশ বিমা একাডেমির পরিচালক এসএম ইব্রাহিম হোসেন বলেন, 'পলিসি খোলার পর মাঝ পথে বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই মূলত অর্থনীতির তুলনায় জীবন বিমার আওতা বাড়ছে না।'

গত কয়েক বছর ধরে বিমা পলিসির মালিকের সংখ্যা ১ কোটি ৭৫ লাখের আশেপাশে ঘুরছে। এই প্রবণতার পেছনে কারণ হিসেবে ইব্রাহিম জানান, প্রতি বছর যতগুলো নতুন পলিসি কেনা হয়, ঠিক ততগুলোই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, 'সচেতনতার অভাবে ও পলিসি নেওয়ার ১ বছর পর থেকে এজেন্টদের কাছ থেকে কম মনোযোগ পাওয়ার কারণে কিছু ভোক্তা কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর প্রিমিয়াম দেওয়া বন্ধ করে দেন। এ কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রিমিয়াম থেকে আয় বাড়ছে না।'

আইডিআরএর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম বছরের পর ব্যক্তিগত বিমাকারীদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আর প্রিমিয়াম দেন না।

বীমা খাতের বিনিয়োগের তুলনায় রিটার্ন কম দেওয়া ও সেবার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যের অভাবকে এই খাতের জনপ্রিয়তা কম থাকার মূল কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।

দেশের একমাত্র বিদেশি বিমা প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমাদ জানান, অর্থনীতির তুলনায় জীবন বিমার আওতা কমছে, কারণ অনেক পলিসিহোল্ডার পলিসি কেনার পর প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন না।

২০২০ সালে জীবন বিমা প্রিমিয়ামের পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশের চেয়েও বেশি কমে ৯ হাজার ৫০১ কোটি হয়। ২০২১ সালে এটি ৮ শতাংশ বেড়ে ১০ হাজার ২৬০ কোটি হয়েছিল বলে আইডিআরএর তথ্যে জানা যায়।

প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জালালুল আজিম বলেন, বিমা প্রতিষ্ঠান নিয়ে 'সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা খুব কম, কারণ এরা ঠিকমত দাবি নিষ্পত্তি করে না।'

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সার্বিকভাবে জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি নিষ্পত্তি করার অনুপাত ২০২০ সালের ৮৮ দশমিক ৩২ শতাংশ থেকে কমে ২০২১ সালে ৬৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ হয়েছে, যেটি জীবন বিমা পলিসি মালিকদের জন্য খুব একটা উৎসাহব্যঞ্জক নয়।

আজিম জানান, এই খাতে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে খুব একটা বৈচিত্র্য নেই।

জনগণের তুলনায় বীমার হার ২০১৩ সালের ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ৮৮৫ টাকা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা গেছে।

উদীয়মান দেশগুলোতে অর্থনীতির তুলনায় জীবন বিমার আওতা গড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে। ভারত ও চীনে এই হার যথাক্রমে ৩ দশমিক ২ শতাংশ ও ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

আইডিয়ারএর চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ জয়নুল বারি জানান, বিমা সংস্থাগুলো দাবি নিষ্পত্তি করতে বেশি সময় নেওয়া এই খাতের ওপর মানুষের ভরসা কম।

'আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা সেসব বিমা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বসেছি, যাদের সুশাসন, দাবির নিষ্পত্তি ও আর্থিক শক্তিমত্তা বজা রাখতে সমস্যা হচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

'আমরা বিমা খাতের ওপর মানুষের আস্থা বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। আমরা সচেতনতা তৈরিতে নজর দিচ্ছি'।

তিনি আরও জানান, আইডিআরএ একটি হটলাইন নাম্বার চালু করেছে, যাতে ভোক্তারা তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন।

(সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে  Life insurance penetration halves in a decade লিংকে ক্লিক করুন।)

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

You have crushed fascism, now strengthen democracy and press freedom

The Daily Star Editor Mahfuz Anam's appeal to the ‘new generation leaders’

10h ago