মোটরসাইকেল বিক্রি কমেছে
মোটরসাইকেল কেনার পর তা নিবন্ধনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এর পরই দেশের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে গেছে।
বিক্রেতারা জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে (জুলাই-আগস্ট) সারা দেশে মোট ৯৮ হাজার ৬৯০টি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৮৯ হাজার ৩৫৫টি।
এই পরিমাণ থেকে যদিও প্রাথমিকভাবে বিক্রি ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে, তবে, প্রকৃত অর্থে গত অর্থবছরে গড়ে বিক্রি বৃদ্ধির হার ছিল ২০ শতাংশ।
গত জুলাইয়ের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মোটরসাইকেল নিবন্ধন নম্বর পাওয়ার জন্য বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে। অনভিজ্ঞ ও অপ্রশিক্ষিত চালকদের কারণে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ঠেকাতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিএ।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
বিআরটিএর এ সিদ্ধান্তের পর হঠাৎ করে মোটরসাইকেল বিক্রি কমে যায় বলে জানিয়েছেন জাপানি ব্র্যান্ড ইয়ামাহার স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর এসিআই মোটরস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস।
মোটরসাইকেল বিক্রি কমার আরেকটি কারণ হলো— মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া। এর ফলে মোটরসাইকেলের দাম গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে।
বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়, এতে তা পেতে ১৯০ দিনের মতো সময় লাগে।
সুব্রত রঞ্জন দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিআরটিএর এ সিদ্ধান্তই মোটরসাইকেল শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'
তবে, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বিআরটিএর এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন বলেই জানিয়েছেন তিনি।
দুচাকার এ যানের সার্বিক বিক্রি কমে গেলেও চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে হাই-এন্ড মোটরসাইকেলের বিক্রি ২৮ শতাংশ বেড়েছে।
বাজার মূল্যায়ন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, '২০২১-২৩ অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোট ৪২ হাজার ৫৯৯টি হাই-এন্ড মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৩৯৭।'
তিনি আরও বলেন, 'দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিকালে অন্যান্য বড় বাহনের তুলনায় এখনো মোটরসাইকেলে চলাচলের খরচ কম।'
ভারতের হিরো মোটরসাইকেলের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের এ সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে লাভজনক, সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারছেন না বলেই সার্বিকভাবে বিক্রি কমেছে।'
'ব্যবসা বাড়ানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য চালক ও বিক্রেতা উভয়কেই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি এড়াতে নিয়ম ও প্রবিধান অনুসরণ করতে হবে', বলেন তিনি।
আব্দুল মাতলুব আহমাদের মতে, মহাসড়কে বা দীর্ঘ যাত্রার জন্য মোটরসাইকেল যথাযথ বাহন না হলেও সাধারণ যাতায়াতের জন্য এটি অত্যন্ত সহায়ক। কারণ মোটরসাইকেল ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে যাতায়াতের সময় কমায় এবং অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় জ্বালানিও কম লাগে।
'আমি মনে করি ভবিষ্যতে মোটরসাইকেল বিক্রি আর কমবে না। বরং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মোটরসাইকেল বিক্রিও বাড়বে। অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় খরচ কম হওয়ায় ভবিষ্যতে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে', বলেন তিনি।
সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর বিষয়ে আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, 'চালকদের সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে এবং ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতন হতে হবে।'
হোন্ডার অর্থ ও বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান শাহ মুহাম্মদ আশিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের একই মাসের তুলনায় আগস্টে সার্বিক বিক্রি ২৮ শতাংশ কমেছে।'
হোন্ডার হিসাব অনুযায়ী, আগস্টে মোট ৪৪ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৬০ হাজার।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার অর্থ হলো, গাড়িটি কেবল ১ জন দক্ষ আরোহীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ সিদ্ধান্ত জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। তাই যদিও শিল্পটি আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে, দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব ইতিবাচক।'
'তবে, বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া যথাযথভাবে তদারকি করতে হবে, যাতে আবেদনকারীরা কোনো ধরনের জালিয়াতি ছাড়াই সহজে লাইসেন্স পেয়ে যান।'
নিজেদের গবেষণার কথা উল্লেখ করে হাদিউজ্জামান বলেন, 'দেশে যতগুলো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার প্রায় ৩৫ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। আর মোট মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মধ্যে ৭৫ শতাংশই ঘটে বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে।'
Comments